রানু ফিরবে এবার পরিবারের কাছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:২৯

টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব এলাকায় চলন্তবাসে গণধর্ষণের শিকার ওই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীর পরিচয় মিলেছে। ওই নারীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায়।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৩নং (গাইনি) ওয়ার্ডের ১৪৯নং একলামশিয়া কক্ষে গিয়ে দেখা মিলল, চলন্ত বাসে আলোচিত গণধর্ষিত প্রতিবন্ধী মেয়েটির। বয়স সাতাশ কিংবা আটাশ হবে। ধর্ষিত হয়ে এই কক্ষে শুক্রবার বিকাল থেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেয়েটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ঝিঁমিয়ে ঝিঁমিয়ে কথা বলতে পারলেও পুরো ঠিকানা বলতে পারেন না মেয়েটি। মেয়েটির সাথে কিছু কথা বলার পর একসময় বলল রানু তার নাম। কুষ্টিয়া তার বাড়ি বললেও ঠিকানা জানাতে পারলেন না তিনি। এতোটুকু বলছেন, ঢাকায় তার বোনের বাড়ি থাকে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরছিল। শহীদ তার বাবার নাম হলেও বারবার বলছে তার কেউ নেই। বাবাও মারা গেছেন। এমন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি চলন্ত বাসে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। কে তার স্বজন, কি তার ঠিকানা। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তা জানা যাচ্ছে না। এজন্য হাসপাতালে স্বজন ছাড়া একাকিত্বভাবে সময় পার করছেন মেয়েটি।

একদিকে ধর্ষণ, অন্যদিকে একাকিত্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। দুজন নারী পুলিশ সদস্য রয়েছে মেয়েটির পাহারায়।

শনিবার সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। অসুস্থ মেয়েটির দেখাশোনা কে করবে? সুস্থ হলেই বা কোথায় যাবে এরকম নানা প্রশ্ন উঠেছে মেয়েটিকে দেখতে আসা সাধারণ মানুষের মনে।

এবার সেই রানুর ভাই এসেছে রানুকে নিতে। রানু ফিরবে এবার পরিবারের কাছে।

ধর্ষিতার ভাই বলেন, ‘গত ২৩ আগস্ট ঢাকার খিলগাঁও বাসা থেকে সে বের হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ঢাকার সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। শনিবার টাঙ্গাইল থেকে পুলিশের বার্তা পেয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার পুলিশ বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় এসে ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করি। পরে রবিবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা আমার বোনের সাথে দেখা করি।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, ধর্ষিতা ওই প্রতিবন্ধী নারীকে নিতে তার ভাই এসেছে। আদালতের নির্দেশে ওই নারীকে সরকারি আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় আটক হেলপারকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠালে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে চলন্তবাসে ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী গণষর্ধণের শিকার হন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি লোকাল বাস অল্প যাত্রী নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিল। পরে ওই নারী যাত্রী ছাড়া সকল যাত্রী তাদের গন্তব্যস্থানে নেমে যায়। এ সুযোগে মেয়েটিকে একা পেয়ে ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার মিলে তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকার শুনতে পেয়ে মহাসড়কে টহলরত পুলিশ বাসটির পিছু নেয়।। পরে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে (যশোর-ব ৪৪২) বাসসহ হেলপারকে আটক করা গেলেও বাসের সুপারভাইজার বিশু, চালক আলম পালিয়ে যায়। এসময় ওই মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।

পরে এসআই নুরে আলম এ ঘটনায় মামলা করেছে। পরে গ্রেপ্তার হেলপারকে শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠালে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :