১৮৫ কি.মি. নদী সাঁতরে মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যের রেকর্ড

নেত্রকোণা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:৫১

৬২ ঘণ্টা বিরামহীন সাঁতার কেটে ১৮৫ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়লেন মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ৬৭ বছর বয়সী এই সাঁতারু সোমবার সকাল ৬ টায় শেরপুর নালিতাবাড়ীউপজেলার ভোগাই নদীর ব্রিজের নিচ থেকে সাঁতার শুরু করেন। তিনদিন দুই রাত বিরামহীন সাঁতার কেটে বুধবার সন্ধ্যা ৭ টা ৫৫ মিনিটে নেত্রাকোণার মদন উপজেলার মগড়া ব্রিজে এসে পৌঁছান।

বয়সের কাছে হার না মানা এ মুক্তিযোদ্ধাকে শত সহস্র জনতা করতালি ও ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়।

এ সময় নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মো. আরিফুল ইসলাম, মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার খান এখলাছ, পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার শামীম, আওয়ামী লীগ নেতা বিমান বৈশ্য তাকে বরণ করে নেন।

পরে পানি থেকে তুলে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নেতৃত্বে অ্যাম্বুলেন্স যোগে বেসরকারি হাসপাতাল সুমাইয়া হেলথ কেয়ার সেন্টারে নেয়া হয়।

ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের ক্ষিতিশ চন্দ্র বৈশ্যের ছেলে। তিনি বেসরারিক বিমানের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদীঘি পুুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন বলে সোমবার সকালে সাঁতার শুরুর আগে এক প্রতিক্রিয়ায় জানান ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।

তিনি আরো বলেন, জীবনে অনেক সাঁতার কেটেছি, এটাই হবে হয়ত আমার শেষ সাঁতার। মদন নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার কাছে আমি কৃতজ্ঞ তাঁরা এমন একটি সাঁতারের আয়োজন করার জন্য।

তিনি বিভিন্ন সময়ে সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নেন। তিনি ১৯৭০ সালে মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে তিনি ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আলোচিত হন। এটিই তার প্রথম সাঁতার প্রদর্শনী। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারী হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথহলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন।

জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার কেটে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তার একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতেও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। ২০১৭ সালে ৬ আগস্ট টানা ৪৪ ঘণ্টা সাঁতার কেটে ১৪৬ কিমি পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন। তিনি সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন।

এদিকে এই সাঁতারুর এমন কৃতিত্বে মদন উপজেলা প্রশাসন, নাগরিক কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের আয়োজনে নদীর পাড়ে হাজারো লোকের সমাগম ঘটে। পরবর্তীতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও নাগরিক কমিটি আলাদা আলাদা সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান মদনবাসীর পক্ষ থেকে এই কৃতিত্বকে বিশ্ব রেকর্ডে স্থান দেয়ার দাবি জানান।

সাঁতার শেষ করে চিকিৎসা শেষে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলেন, সকলের আর্শীবাদে আমি সাঁতার শেষ করেছি। অদম্য ইচ্ছা থাকলে সবকিছু করা সম্ভব। নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিলে তারাও ভালো করবে। আমার এই অনবদ্য সাঁতারটি যেন গিনেজ বুকে স্থান পায় তার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মুক্তিযোদ্ধা সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।

ঢাকাটাইমস/০৬সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :