ভারত থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন সেই তাজু বেগম

মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন তাজু বেগম। অবৈধভাবে সীমান্তপাড়ি দিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন আট বছর আগে। সেখানে জেলখানায় ঠাঁই হয় তার। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় ফিরলেন নিজ দেশে। তবে জীবিত নয় এলেন কফিনে মোড়া লাশ হয়ে।

আগরতলা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাতে মারা যান তাজু বেগম। তিনি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষীপুরের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী।

২০১০ সালে ৮বছর বয়সের ছোট্ট শিশুটি বাড়িতে ফেলে মানসিক ভারসাম্যহীন তাজু বেগম হারিয়ে যায়। আট বছর পর মায়ের আসার খবরে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তে যান ছেলে আমিনুল ইসলাম। পরে সীমান্ত রেখা ভুলে দৌঁড়ে কফিনে লুটিয়ে পড়েন মা হারা ছেলে আমিনুল ইসলাম তালুকদার (১৬)।

তার আর্তনাদে বাংলাদেশ-ভারত নোম্যান্সল্যান্ডের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, আমিনুলদের অভাব আর অনটনের সংসার। আমিনুলের বাবা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার একাধিক বিয়ে করেন। তার মা ছিল পরিবারের ছোট বউ। অভারে সংসারে টানাপোড়ানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাজু বেগম। এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

২০১০ সালে ছোট্ট আমিনুলকে বাড়িতে ফেলে হারিয়ে যায় তার মা। এক পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তপথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে চলে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন তাজু বেগম। ২০১০ সালের ৩১অক্টোবর ত্রিপুরা রাজ্যের বিশ্রামগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে। সেই থেকে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ্ হয়ে পড়েন।

পরে সেখানকার কারা কর্তৃপক্ষ তাকে রাজ্যের আগরতলা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসার পর তার শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিকতা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়।

এক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি তার নাম পরিচয় জানান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানসিক হাসপাতালে গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাজু বেগম মারা যায়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারি হাইকশিনার মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেনকে অবহিত করেন। পরে হাইকমিশনের উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যায় আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তপথে পরিবারের স্বজনদের কাছে তাজু বেগমের লাশ হস্তান্তর করা হয়।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন, রাজ্যের আগরতলা বিমান বন্দর থানার এসআই অশোক বিষ্ণু, এসআই মাধবী এবং আখাউড়া থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন, আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই পিয়ার হোসেন, চেকপোস্ট ক্যাম্প কমাণ্ডার মুখলেছুর রহমান, আখাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মহিউদ্দিন মিশু প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০৯ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ওআর)