বিদেশি ফল চাষে মামা-ভাগিনার সাফল্য

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:৪৭

আতাউর রহমান ও আব্দুল আজিজ দুজন মামা-ভাগিনা। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার অজপাড়া গাঁয়ের গোদারচালা গ্রামে তাদের বাড়ি। বয়সের ব্যবধান খুব বেশি না হওয়ায় সম্পর্ক বন্ধুত্বকে ছাড়িয়ে গেছে। স্নাতক পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে দুই মামা-ভাগিনা সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য তাদের কিছু একটা করতে হবে।

২০১৩ সাল, প্রথম বছরে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিজেদের পতিত জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করেন। তাদের এ চাষই গাজীপুরে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ।

সবাইকে তাক লাগিয়ে প্রথম বছরেই তাদের আয় হয় ১১ লাখ টাকা। এভাবে দ্বিতীয় বছর ১৬ লাখ ও তৃতীয় বছর ১৮ লাখ টাকা লাভ করেন স্ট্রবেরি চাষের মাধ্যমে। এতে দুইজনের কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা আরো বেড়ে যায়, এরপর ড্রাগন ফল, থাই পেয়ারা ও বারি-২ জাতীয় মাল্টা চাষ শুরু করেন। নিজেদের শ্রম ও মেধায় প্রতিনিয়ত সফলতা পাওয়ায় কয়েক বছরেই ১০ একর জমিতে গড়ে তুলেন বিদেশি নানা ধরনের ফলের বাগান। কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, ব্যক্তি উদ্যোগে এটিই জেলার সবচেয়ে বড় বিদেশি ফলের খামার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তাদের লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরেই কোটি টাকার উপরে ফল বিক্রি করার। এখন এই বিদেশি ফল চাষ কীভাবে পুরো জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন তারা।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা গ্রামে তাদের এই ফল জাতীয় কৃষি খামার। সড়ক লাগুয়া বাড়ির চারপাশজুড়ে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু দেখা যায়, মাল্টার বাগান, দুইবছর বয়সী বাগানের ভেতর ঢুকেই দেখা গেল- গাছের সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে থোকা থোকা মাল্টা। গাছে এখন পরিপক্কতায় রূপান্তরিত হচ্ছে মাল্টা জাতীয় ফলগুলো, আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই তা গাঢ় হলদে রঙে রূপান্তরিত হবে। তাদের বাগানে বর্তমানে ১০ হাজারের উপর উৎপাদনশীল বারি-২ জাতীয় মাল্টা গাছ, কয়েকশ ড্রাগন ফল গাছ রয়েছে। দুবছর বিরতীর পর কিছুদিন পূর্বে আবারও শুরু করেছেন স্ট্রবেরি চাষ। তবে লাভজনক লেমন গ্রাস (থাইপাতা) চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এসব ফসলের ভেতর আবার স্বল্প মেয়াদী সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন বেগুন চাষ। যা অনেকটা একের ভেতর দুইয়ের মত। নিজেরা স্বল্প সময়ে বিদেশি ফল চাষে সফলতা অর্জন করায় এখন এসব চাষ সাধারণ লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই, তাদের বাগান থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কলম তৈরি করছেন, যা আগামী মাস থেকেই শুভেচ্ছা মূল্যে বিক্রি হবে। তাদের লক্ষ্য বিদেশি ফল চাষে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বিনামূল্যে পরামর্শ দিয়ে এই চাষটাকে ছড়িয়ে দেয়া এতে বিদেশ থেকে আমদানিকরা ফলের নির্ভরশীলতা অনেকটা কমবে।

বিদেশি ফল চাষে সফল তরুণ উদ্যোক্তা আতাউর রহমান জানান, তার বাবা সিরাজউদ্দিন ছিলেন একজন কৃষক। ছোটবেলায় বাবাকে মাঠে কাজের সহযোগিতার সময় তার কৃষির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। লেখাপড়া শেষে তিনি নিজেই কৃষিতে আত্মনিয়োগ করেন এসময় তার সাথী হন ভাগিনা আব্দুল আজিজ। প্রথমেই তারা ব্যতিক্রমী ধারণা নিয়ে বিদেশি ফলের চাষ শুরু করেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে তিনি গাছগুলোর পরিচর্যা করে সফলতা পান। তবে তার স্বপ্ন ছিল আরো বড় পরিসরে এ চাষ করার, যদিও বাধা হয়ে আছে জমির স্বল্পতা, শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শিল্পায়ণ হওয়ায় একসাথে অধিক পরিমাণে কৃষি জমি পাওয়া যায় না। আবার পেলেও কেউ দীর্ঘদিনের জন্য ইজারা দিতে চান না। দেশীয় মাটিতে বিদেশি এসব উৎপাদিত ফল সুস্বাদু হওয়ায় সাধারণ বাজারদরের চেয়ে দামও বেশি পাওয়া যায়। আর বিষমুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে এর চাহিদাও রয়েছে।

অপর, উদ্যোক্তা আবদুল আজিজের মতে, আমরা যখন এসব ফল চাষের সিদ্ধান্ত নিলাম তখন আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের কাছ হতে বাধা এসেছে, তবু থামিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই যেভাবে হোক সামনে এগুতে হবে। কয়েক বছরেই আমরা সফল হয়েছি। আমাদের দেখাদেখি আরো অনেকেই, বিশেষ করে তরুণরা, উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসবে তাহলেই বিদেশ থেকে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুয়ীদ উল হাসান জানান, বারি-২ জাতীয় মাল্টা আমাদের দেশীয় আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী এটি আমাদের বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত। দেশীয় মাটিতে উৎপাদিত মাল্টা খুবই সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, এছাড়াও ড্রাগন ও স্ট্রবেরিরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ দুজন সফল উদ্যোক্তা ফল চাষ করে খুব স্বল্প সময়ে সফল হয়েছে, তাদের কৃষি খামারটি এখন গাজীপুরের সবচেয়ে বড় বিদেশি ফলের খামার।

(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :