সাফল্য পেতে সময়কে কাজে লাগান
প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৪ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০৪
বাস্তব জীবনে অনেকেই আমরা ভাবি, আমার যদি এত টাকা থাকত তাহলে কি কি করতাম? ধরে নেওয়া যাক, টাকার অঙ্কটা ৮৬ হাজার। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে খরচ করার জন্য ৮৬ হাজার টাকা দেওয়া হলো। কেউই হয়তো পুরো টাকাটা আনন্দে ফুর্তিতে ব্যয় করতে চাইবে না। বুদ্ধিমান হলে অন্তত কিছু টাকা সে সঞ্চয় করতে চাইবে। এবার চিন্তাটা একটু ভিন্ন মাত্রায় যদি করা যায়!
আমাদের জীবনের প্রতিটি দিন আসে ৮৬ হাজার সেকেন্ড সময় নিয়ে। এই সময়টাকে যদি টাকার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে আমরা কি চাইব পুরোটা সময় হাসি-আনন্দে নষ্ট করে দিতে? যদি না চাই টাকার মতো সময়টাকে ভাগ করে নেব কিভাবে সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এটা আসলে একটা উদাহরণ মাত্র।
মানুষের সব চাওয়া-পাওয়ার স্বপ্নকে যদি শ্রেণিবদ্ধ করা যায় তাহলে দেখা যায় সে জীবনে মূলত ৩টি জিনিস চায়। আর সেই ৩টি জিনিস হলোÑ হেলথ, ওয়েলথ, হেপিনেস। ইদানীং দেখা যায় সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে আমরা মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করতে থাকি। দেখতে থাকি গুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাসেজ, পোস্ট আছে কি না? ৫ মিনিট সময় কাটানোর কথা ভেবে কেটে যায় কতটা সময় নিজেও খবর রাখি না। এখন মিলিয়ে দেখতে হবে ঘুম থেকে উঠে কোন কাজটা করলে হেলথ, ওয়েলথ, হেপিনেস অর্জিত হবে।
ফেসবুকে সময় কাটালে কোনোটাই হবে না বরং অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকে নানারকম নিউজ আর পোস্টের কারণে মনটা হতাশা, একাকিত্ব আর বিক্ষিপ্ততায় ভরে যায়। আবার ধূমপায়ীদের ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই সিগারেট ধরাতে দেখা যায়। কিন্তু যদি সকালটা এভাবে শুরু করা যায় যে, ঘুম থেকে উঠে প্রথমে এক গ্লাস পানি পান করে ফ্রেশ হতে হবে। এর পর ধর্মীয় প্রার্থনা, যোগ ব্যয়াম বা হালকা শারীরিক কসরত করতে হবে। তাহলে কেমন হতো?
আসলে প্রতিদিনের ৮৬ হাজার সেকেন্ড একটা পরিকল্পনামাফিক ভাগ করে নেওয়া উচিত। তাহলে নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করার মানসিকতা গড়ে উঠবে। অনেক সময় এ রকম দেখা যায় যে, শুরু করার সময়ই মন বাধা দেয়। মনে হয়, থাক আজকে বাদ দেই। কাল থেকে সব কিছু সময়মতো ঠিকঠাক করে নেব। এই কাল আর তার জীবনে আসে না। সমাজে ওয়েলথের স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বপ্নেই ডুবে থাকা মানুষের সংখ্যা বেশি। কেউ সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করতে চায় না। আসল কাজটা হচ্ছে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য এখনই শুরু করা প্রয়োজন। শুরু করতে পারলে এগিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে। দিন শেষে প্রতিদিনের প্রাপ্তির হিসাব মিলানো অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আজকের দিনের কর্মকা- ওয়েলথ অর্জনে কতটা সহায়ক হলো তার পরিমাপ করা দরকার। যদি পরিতৃপ্ত না হই তাহলে কাজ ও প্রচেষ্টা আরো বাড়াতে হবে। কোনো অজুহাতে যেন সময়টা নষ্ট না হয় সেটা খেয়াল রাখা সবচেয়ে জরুরি।
অনেকেই ভাবি কাজ না করে মুভি দেখি বা নিউজ পড়ি, তাহলে সময়টা সবচেয়ে ভালো কাটবে। হয়তো প্রথমে কিছুটা ভালোও লাগে, কিন্তু পরে তা একঘেঁয়েমিতে পরিণত হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ভাবতে হবে, এই যে সময়টা ব্যয় করলাম সেটা থেকে শিক্ষণীয় কি ছিল? যে শিক্ষা পরে হেলথ, ওয়েলথ, হেপিনেস তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে সময়টা ব্যয় করা সার্থক হয়েছে। আর যদি সেটা শুধুই সময় কাটানো হয় তাহলে জীবনে পিছিয়ে পড়তে হবে। ফলে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব তো মিলবেই না, বরং একসময় জীবন হতাশায় ভরে যাবে। তাই এখন থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগান। কাজ করে হিসাব মিলিয়ে দেখুন কতটা অগ্রসর হলেন। নিজের কাজে নিজেকে সন্তষ্ট করুন যে, আপনি সঠিক পথে আছেন। তাহলেই একদিন সাফল্য এসে ধরা দেবে আপনার কাছে।
এ এম আব্দুল্লাহ: লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা