পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে হচ্ছে জাদুঘর, প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৪৪ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারটিকে জাদুঘর বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ৬০৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারটি পুরান ঢাকার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।

একনেক সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার সময় সাংবাদিকদের এ কথা জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।  যার পুরোটাই সরকারি অর্থায়ন। প্রকল্পটি কারা অধিদপ্তর এবং ইএনসিজ ব্রাঞ্চ, ওয়ার্কস ডাইরেক্টরেট, ঢাকা সেনানিবাস বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদকালে বাস্তবায়িত হবে।

মন্ত্রী  বলেন, বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সবচেয়ে বেশি দিন কাটিয়েছেন। এই কারাগার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ২৩০ বছরের। কারাগারটির সঙ্গে জাতীয় চার নেতার স্মৃতিও জড়িয়ে আছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের বাসায় মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি মেয়ে কাজ করতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য ‍দিয়ে সহায়তা করতেন। কখনও চুলের খোপায় চিঠি নিয়ে পৌঁছে দিতের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জানতে পেরে মেয়েটির দুই পা দুই গাড়ির সঙ্গে বেঁধে গাড়ি চালু করে। এতে মেয়েটি মারা যায়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,  পুরান ঢাকায় বিনোদনের তেমন জায়গা নেই। এখানে তারা খোলামেলা পরিবেশে হাঁটতে পারবে। ইতিহাস জানতে পারবে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি  জাদুঘর ও চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর এবং ঢাকার মধ্যযুগের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা, কারা অধিদপ্তরে জমির পরিকল্পিত ব্যবহার; উন্মুক্ত নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুযোগ; গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি এবং পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা। 

প্রকল্পটি সম্পর্কে জানানো হয়, বাংলাদেশে কারাগার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ২৩০ বছরের। কেন্দ্রীয় করাগারটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকারী দেশপ্রেমিক অসংখ্য বাঙালির ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত আন্দোলনকারী অসংখ্য দেশপ্রেমিক এই কারাগারে কারাবরণ করেছেন। কেন্দ্রীয় কারাগারটি ১৮০৬ সালে ২১.৯০ একর জমির উপর নির্মিত হয়।

পুরাতন কারাগারটি জরাজীর্ণ এবং বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় ২০১৬ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারটি স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে পুরাতন কারাগার এলাকাটি অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। পুরান ঢাকার এই কেন্দ্রীয় কারাগারটির সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা এবং কারাগার সংলগ্ন প্রায় ২১.৯০ একর সরকারি জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।

প্রকল্পটির আওতায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর সংরক্ষণ; ছয় তলার মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স নির্মাণ, চক কমপ্লেক্স নির্মাণ, স্কুল নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার করা হবে।

প্রসঙ্গত, এই কারাগারটি এখন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পাওয়ার পর থেকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পরিত্যক্ত কারাগারটিতেই আছেন।

(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/জেআর/জেবি)