পিয়াল চাকমার চমক

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
 | প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৩১

পাহাড়ে টার্কি পাখি পালন করে তাক লাগিয়েছেন রাঙামাটির নানিয়ারচরের পিয়াল চাকমা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করা এ তরুণ নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবারে এনেছেন সচ্ছলতা। পিয়ালের সফলতায় পাহাড়ে টার্কি খামারের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

সম্প্রতি নানিয়ারচরে টিএনটিতে পিয়ালের খামারে গিয়ে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের ছোট্ট দ্বীপে পিয়ালদের বাড়ি। চারদিকে কাপ্তাই হ্রদ। দুপুর বেলা তখন। পুরো দ্বীপে বিচরণ করছিল টার্কি পাখিগুলো। কিছু পাখি গাছের ছায়ায়, কিছু পাখি রোদে বিশ্রাম নিচ্ছিল। কিছু ঝোপঝাড়ে লতাপাতা খাচ্ছিল আর কিছু খামারে। শত টার্কি পাখির কিচিরমিচির ডাক কানে আসছিল চারদিক থেকে।

কথা হয় উদ্যোক্তা পিয়াল চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান ২০০৪ সালে। ২০১১ সালে পড়াশোনা (বিএসসি ডিপ্লোমা) শেষ করে বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে যান গাজীপুরে। গাজীপুরের সেই বন্ধুর বাড়িতে ছিল টার্কি পাখি। তার কাছ থেকে তিনটি টার্কি পাখির বাচ্চা নিয়ে আসেন নানিয়ারচরে। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার।

সেই টার্কি থেকে আজ সাড়ে চার শর বেশি টার্কি এখন পায়েলের খামারে। পাশাপাশি পালন করছেন তিতির পাখিও। পিয়াল বলেন, বর্তমানে খামারের পাখিগুলোর মূল্য ১৫ লাখ টাকার ওপরে হবে। পিয়ালের মা-বাবা দুজনই সরকারি চাকরি করেন। তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলে চাকরি করবে। কিন্তু তাদের ছেলে পড়াশোনা শেষ করে হয়েছে খামারী। মা-বাবা দুজনই ছেলেকে সহায়তা করছেন। ছেলের এ সাফল্য দেখে খুশি তারা।

পিয়ালের মা ধনীতা চাকমা বলেন, ছেলে আর চাকরির চিন্তা করে না। সে এখন পুরোদমে খামারী হয়েছে। টার্কি পাখিদের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে আমাদের সবার। তার খামারের পাখি দেখে আমাদের আনন্দ হয়। শখের কারণে আমরা সবাই তার খামার দেখাশোনা করি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে চাকরি করা পিয়ালের বাবা জ্যোতি কান্তি চাকমা বলেন, ছেলে আর চাকরি করতে রাজি নয়। টার্কি ফার্মের দিকে সে বেশি মনোযোগী।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোরঞ্জন ধর বলেন, টার্কি পাখির রোগ বালাই কম। তাছাড়া টার্কি পাখির খাবারের তালিকায় ৬০ ভাগের অধিক খাবার লতাপাতা। বাকি অংশ দানাদার খাবার। টার্কি পাখির মাংস সুস্বাদু ও শরীরের জন্য উপকারী। এ মাংসে কোলেস্টেরল নেই। তিনি আরো বলেন, পিয়ালের খামার ছাড়া রাঙামাটিতে এখনো কোনো টার্কির খামার নেই। পাহাড়ে টার্কি খামার বেকারত্ব দূর করতে ভ‚মিকা রাখবে বলেন মনোরঞ্জন ধর।

পিয়াল চাকমা বলেন, ‘চাকরি করার চিন্তা করি না। কারণ অর্থনৈতিক মুক্তি আসলে চাকরির প্রশ্ন আসে না। ভালো জায়গা পেলে এ খামার আরো সম্প্রসারণ করব।’

তার খামারের টার্কি এক মাস বয়সী জোড়া তেরশ টাকা, দুই মাস বয়সী জোড়া দুই হাজার, পূর্ণ বয়স্ক জোড়া ৪ হাজার এবং আকারে বড়গুলো কেজি চারশ টাকা করে বিক্রি করছেন। যে কেউ তার খামার থেকে টার্কি পাখি সংগ্রহ করতে পারবে জানিয়ে রেখেছেন পায়েল।

পিয়াল বলেন, পাহাড়ে অনেক অনাবাদি জমি আছে। যে কেউ চাইলে টার্কি খামার করে বেকারত্ব দূর করতে পারবে। পাহাড়ের বেকার তরুণ সমাজ আমার মতো খামার করতে পারে। এ খামার করা কঠিন কোনো কাজ নয়।

একই প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর বলেন, পাহাড়ে দারিদ্র্য মুক্ত করতে ভ‚মিকা রাখবে এ টার্কি খামার।

ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :