‘অদ্ভুত মামলার ফল সরকারের বিপক্ষে যেতে পারে’

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মামলার পরিমাণ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। পুলিশ এমন কিছু মামলা দিয়েছে যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। ৮৪ বছরের বৃদ্ধ, যিনি প্যারালাইজড তার বিরুদ্ধে হয়েছে নাশকতার মামলা। ঘটনার সময় যিনি হজের সফরে ছিলেন তার বিরুদ্ধেও হয়েছে মামলা। তাছাড়া মৃত ব্যক্তিকে ‘নাশকতা করতে দেখা’র পুলিশ প্রতিবেদন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা হাস্যরস।

এসব বিষয়কে ‘অদ্ভুত’ আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। এর দ্বারা শেষ সময়ে এসে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এসবের ফলাফল সরকারের বিপক্ষে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন রাজনীতির এই বিশ্লেষক।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন নঈম নিজাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী।

নঈন নিজাম ব‌লেন, ‘অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। পু‌লিশ‌কে এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকার দরকার ছিল। যারা আইনশৃঙ্খলার স্বাভা‌বিক গ‌তি‌কে নষ্ট ক‌রে তাদের চিহ্নিত ক‌রে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ মামলা দিল মৃত ব্যক্তির না‌মে। যিনি প্যারালাইসড, ঘর থে‌কে বের হ‌তে পা‌রেন না গত ক‌য়েক বছ‌র ধরে; কিংবা যিনি ওই সময়টায় হ‌জে ছি‌লেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।’

‘যারা অপরাধই ক‌রে‌নি তা‌দের বিরু‌দ্ধে মামলা দি‌লে সেটা জনগণ গ্রহণ করবে না। আ‌মি ম‌নে ক‌রি সাম‌নে নির্বাচন, এ ক্ষে‌ত্রে সরকা‌রেরও ভাবমূ‌র্তি নষ্ট হ‌তে পারে। ফলাফল সরকা‌রের বিপ‌ক্ষেও যে‌তে পা‌রে।’

‘ক‌মি‌টি ধ‌রে ধ‌রে মামলা’ এমন খবরের ব্যাখ্যায় নঈম মিজান ব‌লেন, ‘বর্তমানে কর্মসূ‌চির চেয়ে মামলা বে‌শি হ‌চ্ছে। আর এই রাজ‌নৈ‌তিক ‌বিষয়‌টি সবসময়ই আমা‌দের দে‌শে হ‌য়ে থা‌কে। ক্ষমতাসীনরা খুব স্বাভা‌বিকভা‌বেই  তা‌দের অবস্থান ধ‌রে রাখার জন্য প্র‌তিপ‌ক্ষের বিপ‌ক্ষে এক‌টি অবস্থান নি‌য়ে থাকে। আবার প্র‌তিপক্ষও ম‌নে ক‌রেন, এক‌টি প্র‌ক্রিয়ার ম‌ধ্য দি‌য়ে আমা‌কেও ক্ষমতায় আস‌তে হবে।‘

নঈম ব‌লেন, ‘অতী‌তেও আমরা দে‌খে‌ছি, বিএন‌পি ক্ষমতায় থাকাকালে সা‌বের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক‌টি মামলা হ‌য়ে‌ছিল। বিষয়টা ছিল খুবই অদ্ভুত।  এছাড়া ২০০১ সা‌লের পর বিএন‌পি তা‌দের অবস্থান ধ‌রে রে‌খে আওয়ামী লী‌গের ওপর এক‌দি‌কে মামলা-হামলার যে ঘটনাগু‌লো ঘ‌টে‌ছিল, সেই অ‌তীতগু‌লোই কিন্তু বর্তমান‌কে টে‌নে এনে‌ছে। অতীত সরকার এরকম কোনো ভুল ক‌রে থাকলে পরের সরকারও কিন্তু একই রকম ভুল ক‌রে।‘ 

জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, ‘বাস্তবতার জায়গাটুকু‌তে সরকার হয়‌তে মনে কর‌ছে সাম‌নে যে নির্বাচনটা হ‌চ্ছে, সে নির্বাচ‌নে ক্ষমতায় আস‌তে হ‌লে বিপ‌ক্ষের শ‌ক্তি‌কে চা‌পের মু‌খে রাখ‌তে হ‌বে। বিপক্ষ শ‌ক্তি‌কে চা‌পের মু‌খে রাখ‌তে হ‌লে প্রথমে আমরা দে‌খে‌ছিলাম সভা-সমাবেশ করার বিষয়‌টি। সরকার এতদিন সভা-সমাবেশের অনুম‌তি দেয়‌নি, তা কিন্তু ধী‌রে ধী‌রে দি‌তে শুরু করে‌ছে। য‌দিও নয়াপল্ট‌নের কার্যাল‌য়ের সাম‌নে থেকে বি‌চ্ছিন্ন গ্রেপ্তা‌রের ঘটনা ঘ‌টে‌ছে, ত‌বে অনেক‌ দিন পর বিএন‌পি কিন্তু গত ক‌য়েক দি‌নে ভা‌লো কিছু সমা‌বেশ দেখা‌তে সক্ষম হ‌য়ে‌ছে।‘

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ব‌লেন, ‘পাল্টা ব্যবস্থা হি‌সে‌বে সরকা‌রের পক্ষ থে‌কে হয়‌তো যেটা বলা হ‌চ্ছে, ঢাকার আইনশৃঙ্খলা স্থি‌তিশীল রাখার জন্য এবং বর্তমা‌নের রাজনী‌তির ধারা ধ‌রে রাখার জন্য। যেখা‌নে স‌ন্দেহ ম‌নে হ‌চ্ছে সেখানেই  মামলা হ‌চ্ছে।‘

ডি‌জিটাল নিরাপত্তা আইন নি‌য়ে সাংবা‌দিকসহ স‌চেতন মহল যে প্রস্তাব দি‌য়ে‌ছিল সেটা সরকারের পক্ষ থে‌কে আম‌লে না নেয়ার বিষয়‌টি‌কে দুঃখজনক ব‌লে মন্তব্য ক‌রেন প্রবীণ এই সাংবাদিক। বলেন, ‘আইন প্র‌য়ো‌গের একটা বড় বিষয় রয়েছে। ২০০৬ সা‌লে বিএন‌পি এক‌টি প্রযু‌ক্তি আইন ক‌রে দি‌য়ে গি‌য়ে‌ছিল। পরবর্তী সম‌য়ে যে সরকার ক্ষমতায় এলো তার এর ধারাবা‌হিকতা ধ‌রে রাখ‌ল।‘

‘বর্তমান আইন নিয়ে সাংবা‌দিকদের সঙ্গে বৈঠ‌কে মন্ত্রীরা যে ক‌মিট‌মেন্ট করেছিলেন তা তারা রাখেননি। আমা‌দের সেই বিশ্বাসটুকু ছি‌ল যে তারা  কথাগু‌লো রক্ষা কর‌বেন। ৩২, ২৮ কিংবা ২৪ ধারায় যে আপত্তি ছিল সেগুলো কিন্তু এখ‌নও আ‌ছে। এখা‌নে কিছু শব্দগত প‌রিবর্ত‌নের চেষ্টা ক‌রে‌ছে।’

নঈম বলেন, ‘রংপুর ও রামুতে যে গুজবগু‌লো ছড়ি‌য়ে‌ছে, সেগু‌লো ছ‌ড়ি‌য়ে‌ছে ফেসবুক, টুইটা‌রের ম‌তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য‌মে। সরকা‌রের উ‌চিত ছিল সেগু‌লো‌কে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। সতর্কতার জন্য যতটুকু করা দরকার ততটুকুই করা উচিত ছিল।’

‘আমার কা‌ছে আইনগু‌লো ভা‌লো, কিন্তু আমরা সংবাদমাধ্যম‌ তো জনগ‌ণের কা‌ছে অঙ্গীকারাবদ্ধ, সরকা‌রের কা‌ছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এখা‌নে আমা‌দের কী হ‌বে। অপপ্রয়োগটা ক‌তে ভয়ঙ্কর হ‌বে!’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধ‌রেন ইয়াব বা মাদক ব্যবসা‌য়ী‌দের বিরেু‌দ্ধে সরকার যে জিহাদ ঘোষণা করল, আ‌মি সেই দু‌ষ্টু লো‌কের বিরু‌দ্ধে লি‌খে দিলাম। এখন সে য‌দি এই  ধারাগু‌লো‌তে আমার বিরু‌দ্ধে মামলা ক‌রে দেয়, সেখা‌নে আমার ১৪ বছ‌রের জেল হওয়ার সুযোগ আ‌ছে। সে জায়গায় তাহ‌লে কি আমরা কোনো কিছু লিখ‌তে পারব না?‘

আইন‌টি পাস হ‌ওয়ার আ‌গে বিষয়‌টি নি‌য়ে সরকার ভে‌বে দেখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আইনটি এখনও সংশোধনের সুযোগ আছে বলে মনে করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৪সে‌প্টেম্বর/এএ‌কে/জেবি)