দেশের অগ্রগতিতে খুশি হতে পারে না যারা

শেখ আদনান ফাহাদ
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:০৯ | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৫

নিজের মায়ের সাফল্যে সন্তানের খুশি হওয়ার কথা। নিজের দেশের সাফল্যে বা অগ্রগতিতেও নাগরিকদের খুশি হওয়ার কথা। যার যার দেশ তার কাছে মায়ের মতই। ইংরেজিতে বলে মাদারল্যান্ড, বাংলায় মাতৃভূমি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও এ স্বাভাবিক প্রবৃত্তির বাইরে নয়।

কিন্তু একশ্রেণির শিক্ষিত মানুষের দেখা মিলে যারা বাংলাদেশের ইতিবাচক কোনো অর্জন চোখে দেখে না, দেখলেও না দেখার ভান করে, খুঁড়ে খুঁড়ে নেতিবাচকতাকে খুঁজে নিয়ে আসে। শুধু নেতিবাচক সংবাদ আর ঘটনার বিষয়ে উচ্চকিত গ্রুপটি দেশ ও জাতির জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। বাংলাদেশের নাগরিক হলেও দেশের উন্নয়ন তাদের মনে সামান্যতম ভালো লাগার জন্ম দেয় না!

এ দেশে জন্ম নিয়ে, এদেশের আলো-বাতাসে বড় হয়ে, এদেশেরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে, এদেশেই চাকরি বা ব্যবসা করে। এদের বেতন বাড়ে, এরা দেশের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু মুখ ফোটে কোনদিন স্বীকার করবে না। বিদেশের প্রতি এদের মুগ্ধতা শেষ হয় না। দেশের মধুও এদের কাছে গরল বলে মনে হয়। এরাই বোধহয় গোপনে সম্পদ পাচার করে বিদেশের ব্যাংক, বীমাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলে।

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এরা কি মানসিকভাবে সুস্থ? কে মানসিকভাবে সুস্থ, কে সুস্থ নয় তার সনদ দিতে পারে মনোচিকিৎসক। আমরা কেবল অনুমান করতে পারি আর অবাক হতে পারি এই শ্রেণির লোকজনের নিজ দেশের প্রতি পুষে রাখা ঘৃণা দেখে!। এদের সমস্যা কী? আরও এক দল আছেন যারা বিদেশে থাকেন। এরা এমনই বাংলাদেশি যে তাদের চোখে বাংলাদেশের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনই ধরা পড়ে না।

এই ছিদ্রান্বেষী মহল বাংলাদেশের যে কোনো ব্যর্থতায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, কিন্তু সাফল্যে কখনোই উল্লসিত হতে দেখা যায় না। ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় এরা খুব সুশীল ভূমিকা দেখায়, কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারে এরা কখনো উল্লসিত হয় না। বিদেশের চে, ফিদেল, মাও, লেলিনরা এদের ঘরে, আলমারিতে শোভা পায়, কিন্তু নিজ দেশের বঙ্গবন্ধু নিয়ে এরা একটা লাইনও খরচ করে না। দেশের ময়লা, আবর্জনা, যানজট নিয়ে এরা খুব ‘চিন্তিত’, কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, হাতিরঝিল, জাম্বুরি পার্ক, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কিংবা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এদের মনে কোনো প্রকাশযোগ্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। এমনকি খেলাধুলার জগতের কোনো অর্জনও এদের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

জামাতের পেট্রল-বোমা সন্ত্রাস নিয়ে এদের কোনো বক্তব্য থাকে না, কিন্তু গুজব সৃষ্টিকারী শিক্ষিত বন্ধুর জন্য এদের মায়া কান্না শেষ হয় না। এরা কারা? এরাই আবার মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিক করার মানসে সরকারের হাজার কোটি টাকার বাজেট দেখে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এরা কোনমতেই এদেশের মাদ্রাসা কমিউনিটিকে মূল ধারার সমাজে আসতে দিতে চায় না। এরা মূলত বাংলাদেশে শ্রেণি-সংঘর্ষ কামনা করে। এরা কারা? এদের সংখ্যা কত বাংলাদেশে?

দুর্নাম, দুর্গন্ধ, দুঃস্বপ্ন খুঁজে বেড়ানো এই শ্রেণিটি পড়ালেখায় ভালো। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন, কেউ পত্রিকায়, কেউ বা এনজিওতে। এদের সাথে বিদেশি গোষ্ঠীর ভালো যোগাযোগ থাকে।

তবে আরেকদল আছে যারা শুধুমাত্র উন্নয়নের কথা বলে, তাদের চোখে আবার সমস্যা ধরে পড়ে না; এরা কথায় কথায় শুধু উন্নয়ন এর শ্লোগান দিবে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এদের দৃষ্টিতে আসে না; আসে ঠিকই, নিজের চেহারা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সব ব্যর্থতা অস্বীকার করে।

শুধু দুর্গন্ধ খুঁজে বেড়ানো কিংবা শুধু উন্নয়ন এর বুলি আওড়ানো শ্রেণীদ্বয়ের কোনটার মধ্যেই আমরা থাকতে চাই না। আমরা সেই দলে যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কর্মযজ্ঞে শামিল হয়ে সফল হতে চাই। বর্তমান অব্যাহত উন্নয়নের ধারাকে বেগবান ও বিদ্যমান সমস্ত জঞ্জাল দূর করতে বদ্ধ পরিকর।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা বিভাগ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :