হাতের কারুতেই জীবনের স্বপ্ন বোনা

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৩৫

বয়স পঞ্চাশের কোটা ছুঁয়েছে কয়েকমাস হলো, অথচ এই সময়ের বেশিরভাগই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রতিমা তৈরির কাজে। ছোটকালের শখই ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে বেঁচে থাকার অবলম্বনে। দিন-রাত বসে-দাঁড়িয়ে চলে তার দুই হাতের নৈপুণ্য প্রদর্শনের কাজ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী পাঠানটেক গ্রামের মৃত কুলক চন্দ্র দাসের ছেলে ননী চন্দ্র দাস দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সনাতন ধর্মের লোকদের শারদীয় দুর্গা পূজার জন্য প্রতিমা তৈরি করে যাচ্ছেন, তবে নিজে দরিদ্রতার কাছে হার মানলেও অসহায় লোকদের ধর্মীয় উৎসবে প্রায় প্রতিবারেই বিনামূল্যে প্রতিমা দিয়ে থাকেন। তার কাছে ধর্মীয় কাজ করাটাই নিজের কাছে সান্তনা।

একটি ঘরে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন প্রতিমা শিল্পী ননী দাস, সঙ্গে তাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছিলেন স্ত্রী কামনা দাস।

ননী দাসের মতে, খুব ছোটকালে যেখানেই যেতেন খেলার ছলে মাটি দিয়ে ছোট ছোট প্রতিমা তৈরি করতেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শখের কাজও পরিণত হতে থাকে। একটা সময় এই কাজই হয়ে উঠে বেঁচে থাকার অবলম্বন। এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ননী দাস। বড় ছেলে আগামীতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা ননী দাসের সহায়-সম্বল বলতে আছে, শুধু বসবাসের ভিটেমাটি।

তিনি কারো কাছ থেকে এই কাজের যেমন শিক্ষা নেননি, তেমনি আবার পরিবারের কেউ এই কাজে কখনও জড়িত ছিলেন না। শুধু শখ ও ধর্মীয় বিশ্বাসে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিমা তৈরি করে যাচ্ছেন। মাটির উপকরণে হাতের নৈপুণ্যে প্রতিবারের মত এবারও তৈরি করেছেন ১২টি প্রতিমা। এসব প্রতিমার কোন নির্দ্দিষ্ট দরদাম নেই, বিভিন্ন এলাকার পূজা কমিটি তার কাছ হতে প্রতিমা সংগ্রহ করে খুশি হয়ে যে টাকা পয়সা দেন- তাতেই চলে যায় ননী দাসের সংসার।

ননী দাস জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় এ কাজ করে যাচ্ছেন, তার পরিশ্রম লব্ধ গামের ফলে প্রতিমা থেকে যে টাকা পয়সা আসে তাতেই তিনি খুশি, তবে তার স্বপ্ন তার সন্তানরা লেখাপড়া করে মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে সংসারে আলো ফুটাবে। এছাড়াও অনেক এলাকার সনাতন ধর্মের দরিদ্র লোকজনের কথা ভেবে প্রতিবারেই তিনি বিনামূল্যে কয়েকটি প্রতিমা পূজা অর্চনার জন্য দিয়ে আসছেন।

ননী দাসের স্ত্রী কামনা দাসের মতে, তার স্বামী থাকার ঘরের সাথে লাগুয়া একটি ঘরেই দিনরাত অতিবাহিত করেন, প্রতিমাকেই ঘিরেই ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। একাকী নিবিষ্ট কক্ষে সময় কাটানোই তাকে এ ঘরেই খাবার পৌঁছে দিতে হয়। সংসারের কাজ সামলিয়ে মাঝে মধ্যে তিনি স্বামীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। প্রতিমা তৈরির মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন না হলেও তাদের আক্ষেপ নেই, কারণ ধর্মীয় আদর্শ ও বিশ্বাসটাই তাদের কাছে বড়।

বরমী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী ফনিভূসন সাহা জানান, ননী দাস দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন, প্রতিমাকেই ঘিরে তার দিন রাতের সময় অতিবাহিত হয়, এটাই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। নিজে পরিশ্রম করে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে সে, তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।

(ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :