দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব: টিআইবি

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৭ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির মধ্যেই এমন অবস্থানের কথা জানাল সংস্থাটি।

সোমবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন ও শুদ্ধাচার বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

টিআইবি প্রধান বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তারা যদি সহায়ক ভূমিকা পালন করেন, তাহলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’

তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতার সংকট রয়েছে বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান। বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল মেনে না নেয়ার প্রবণতা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।’

‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকে একছত্রভাবে কেন্দ্রীয়করণের প্রবণতা বিদ্যমান। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস পেয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনে আস্থাহীনতার সংকট রয়েছে।’

প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশে যতটা আগ্রহী থাকে, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ইশতেহার বাস্তবায়নে ততটা আগ্রহী থাকে না। তাই সরকার গঠনকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেয়া অঙ্গীকার কতটুকু পূরণ করছে সে সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জানান, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু সাংবিধানিকভাবে বাতিল হয়েছে এখন আমাদের বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে যে সাংবিধানিকভাবে বৈধ যেভাবে নির্বাচন সম্ভব সেভাবে করতে হবে। আমরা যদি পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকাই বর্তমানে পৃথিবীর যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র বিরাজ করছে সেখানে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি নেই। যদিও কোন কোন দেশ এটা কার্যকর করার চেষ্টায় আছে। মোটাদাগে সব দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। আমরা আশা করতে পারি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। এই শ্রদ্ধাবোধ থেকেই সকলের জন্য সমান সুযোগ পালনে সবাই দায়িত্ব পালন করবে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন সহায়ক সংস্থা সহায়ক  করে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যত নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলোই যে বিতর্কিত ছিল তা বলা যাবে না। যে কয়েকটা নির্বাচন ভাল হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো চেয়েছে বলে তা সম্ভব হয়েছে।

সংসদে আত্মপরিচয়ের সংকটাপন্ন বিরোধীদলীয় সংস্কৃতি দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। এসময় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অর্ন্তভুক্তির জন্য টিআইবি ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৩০টির বেশি সুপারিশ করে।

সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সংসদে সরকারি দলের একচ্ছত্র ভূমিকা নিরুৎসাহিত করতে দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি না হওয়া, বিরোধীদলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া, ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে নিয়োগ দেওয়া, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি। এছাড়া দুদকের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা খর্ব করে এমন কোনো আইন সংস্কার না করতেও সুপারিশ করেছে টিআইবি।

ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/জেআর/ওআর/এমআর