‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ নিশ্চিতে সক্রিয় হলো যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৭ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধির অংশ নিয়ে শুরু হলো এক বিশেষ প্রচারাভিযান। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। এর নাম রাখা হয়েছে ‘শান্তিতে বিজয় ক্যাম্পেইন’।  

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই প্রচারাভিযানের উদ্বোধন করা হয়। এতে ৪০টি জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।

ভোটের বাকি আর তিন মাসের কিছু বেশি। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চয়তার মধ্যেই। দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানে পাঁচ বছর আগের মতোই সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সে নিয়ে রয়ে গেছে শঙ্কা। এর মধ্যে বিশ্ব রাজনীতির দুই মোড়ল যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় এই বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু হলো।

এই উদ্যোগ নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশে ব্রিটিশ দূত অ্যালিসক ব্লেক বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এবং আমরা সবাই যাতে শান্তি বজায় রাখতে পারি, এজন্য আজকে একত্রিত হয়েছি।’

মার্কিন সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা সংস্থা ইউকে এইডের যৌথ অর্থায়নে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংগঠনের ‘স্ট্রেংদিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় এই প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও সহনশীল রাজনীতির চর্চা বৃদ্ধিতে, এই প্রচারাভিযানে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং সাধারণ জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করা হবে। এতে ভোটে সবার অংশগ্রহণ করার সুযোগ তৈরি হবে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট ও সমমনারা। পাশাপাশি আন্দোলনে নজিরবিহীন সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় পেট্রল বোমায়। ব্যাপক ক্ষতি হয় অর্থনীতির।

আগামী নির্বাচনেও বিএনপির অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। আর সরকার গতবার বিএনপিকে ভোটে আনতে নানা উদ্যোগ নিলেও এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো ‘দাওয়াত’ দেবেন না। ইচ্ছা হলে বিএনপি ভোটে আসবে, তাতে কোনো বাধাও দেবেন না।

এই পরিস্থিতিতে দুই দলের নেতারা একত্রিত হয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি শপথও পড়েন। আর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতরা এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। বিশেষ করে যেসব দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে তাদের জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচন খুব জরুরি।’

ভোট অংশগ্রহণমূলক করার ওপরেও গুরুত্ব দেন বার্নিকাট। বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার থাকতে হবে। সকলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার থাকতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ থাকতে পারে। তবে সবার প্রতি সহযোগিতা সহমর্মিতা থাকতে হবে।’

নির্বাচনে সহিংসতার বিষয়ে বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সহিংসতা কখনো রাজনৈতিক দলের জন্য সুখকর কিছু বয়ে আনতে পারে না। নির্বাচন চলাকালে, আগে ও পরে যে সহিংসতা হয় তাতে লাভবান হয় স্বার্থান্বেষী মহল। এ বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে।’

‘নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে যাতে কেউ সহিংসতা করে দেশের ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সবাইকে। তাই নির্বাচনের প্রাক্কালে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

‘ইস্যু বা নীতির বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বৈধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীদেরকে পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে মেনে নিতে হবে।’ 

নির্বাচনে সহিংসতা পরিহার করতে রাজনীতিবিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্র বজায় রাখতে বিট্রেন সহায়তা করবে। যারাই নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা সহায়তা করতে চাই। কারণ, মানবাধিকার বজায় রাখতে হলে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। সকলের সমানে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। সকল নাগরিকের অবাধ অংশগ্রহণের  সুযোগ থাকতে হবে।’

ব্রিটিশ দূত বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। মানুষ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহিংসতা চায় না। কারণ সহিংসতা শুধু রাজনীতিকদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করে না সাধারণ মানুষেরও বিশাল ক্ষতি করে। এই কারণে সহিংসতা পরিহার করা উচিত।

অনুষ্ঠানে এতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ক্ষমতাসীন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আক্তার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটইমস/১৭সেপ্টেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি