পুলিশের কব্জায় সবচেয়ে বড় ‘ট্রাক চোর সিন্ডিকেট’

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:০৯

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

দেশের একটি ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যে এই সিন্ডিকেটের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে চোরাই ১২টি ট্রাক ও একটি প্রাইভেটকার।

পুলিশের দাবি, পুরো চক্রটিকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন। এটিই দেশের সবচেয়ে বড় ট্রাক চোর সিন্ডিকেট।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইনে এক প্রেসব্রিফিংয়ে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ এমন তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, এই চক্রটির সঙ্গে বিআরটিএর অসাধু কিছু কর্মকর্তাও জড়িত আছেন। তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।

রবিবার ফরিদপুরের নাগরকান্দা থেকে একটি চোরাই ট্রাকসহ এই চক্রের এক হোতাকে গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার নাম গিয়াস উদ্দিন। নাগরকান্দার ছাগলদী মধ্যপাড়া গ্রামে তার বাড়ি, বাবার নাম আরিফুর রহমান। গিয়াস একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

এসপি জানান, গত ৬ জুন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে একটি ট্রাক চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ রাজবাড়ি জেলা থেকে আবদুল আহাদ আলী শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আহাদ রাজবাড়ী সদর উপজেলার নিমতলা গ্রামের রহমত শেখের ছেলে। আহাদের তথ্যে রাজশাহী থেকে সুজন শেখ ও আরিফুর রহমান ওরফে হযরত আলী নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুজন রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানা এলাকার মকিম শেখের ছেলে। আর আরিফুর রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার মহির উদ্দিনের ছেলে। আহাদ, সুজন ও আরিফুরকে গ্রেপ্তারের পর মনির ওরফে লিখন ওরফে কুদ্দুস নামে এই সিন্ডিকেটের মূলহোতার সন্ধান মেলে।

এরপর গত ৪ জুলাই চট্টগ্রাম সমুদ্র সৈকত থেকে মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আদর্শপাড়া গ্রামে। শুধু ট্রাক চুরি করে বিক্রির মাধ্যমে তিনি কুষ্টিয়ায় পাঁচতলা একটি বাড়ি বানিয়েছেন। ব্যাংকে রয়েছে অগাধ টাকা। মনিরকে রিমান্ডে নেয়ার পর ইসরাফিল ওরফে পারভেজ ওরফে বাবু এবং আবদুল মান্নান নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসরাফিলের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল করিম বিশ্বাস। আর মান্নান যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের মুন্সি রজব আলীর ছেলে।

তাদের তথ্যে সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হলো সিন্ডিকেটের আরেক হোতা গিয়াসকে।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি জানান, গত দুই মাস ধরেই চক্রটির পেছনে লেগে আছে ডিবি পুলিশ। এই সময়ের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নোয়াখালী ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১২টি চোরাই ট্রাক ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে। চুরি করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য চক্রের সদস্যরা প্রাইভেটকারটি ব্যবহার করত। ট্রাকগুলোর মধ্যে একটি আদালতের মাধ্যমে নিয়ে গেছেন মালিক। আরও আটজন মালিক ট্রাক ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেছেন।

এসপি মো. শহীদুল্লাহ জানান, উদ্ধার হওয়া ট্রাকগুলোর প্রায় সবই অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির। এই কোম্পানির ট্রাকের চেসিস নম্বর প্লেট পরিবর্তন করা সহজ হওয়ায় তারা এগুলোকেই টার্গেট করে।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের ৫২৯টি ট্রাক চুরি হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ প্রায় ৮০টি ট্রাক চুরির তথ্য পেয়েছে। এগুলোরও বেশিরভাগ অশোক লেল্যান্ডের। এসব ট্রাক উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

এসপি বলেন, চক্রের সদস্যরা চুরি করার পর প্রথমে ট্রাকের নম্বর প্লেট খুলে ফেলে। এরপর চেসিসের নম্বর প্লেট খুলে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয় নতুন নম্বর প্লেট। তারপর চোরাই ট্রাকে নতুন রঙ করে বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়। এই চক্রে বিআরটিএরও কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তারা রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার পর ট্রাকগুলো ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। এভাবে চক্রের সদস্যরা বিপুল অর্থের মালিক হয়।

জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশের সবচেয়ে বড় ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের প্রায় সব সদস্যের ব্যাপারেই তথ্য পাওয়া গেছে। একে একে সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হবে। চোরাই আরও ট্রাক উদ্ধার করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এখন চক্রটির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিআরটিএ কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নজরদারি করা হচ্ছে। উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/আরআর/এলএ)