মুখোমুখি জাফরুল্লাহ-২

প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বুদ্ধিমতী, একটা উপায় বের করবেনই

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৫ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৯

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে যে সংকট, সেটার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তার ওপরই আস্থা রাখছেন আওয়ামী লীগবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্যের’ চেষ্টায় মধ্যস্থতাকারী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বরাবর আওয়ামী লীগের কট্টর এই সমালোচক বলেছেন, শেখ হাসিনা ভালোভাবেই জানেন, কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয় এবং তিনি একটি উপায় খুঁজে বের করবেনই।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় এই ঐক্যের আলোচনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক নানা বিষয় উঠে এসেছে। আজ থাকলে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।

ঐক্য হলো এরপর কী হবে? ধরুন সরকার এবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিল না, তাহলে কী হবে? বিএনপি বা যুক্তফ্রন্ট কি নির্বাচনে যাবে?  

নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না মেনে তাদের কোন পথ নেই। তারা মেনে নেবে। এক আধটু এদিক সেদিক হতে পারে, সেই জন্য আমাদের দাবি সুচিন্তিত। সরকারে শেখ হাসিনা থাকতে পারেন তবে নির্বাচন করবেন না কথা দিতে হবে। শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী হতে চায় তবে নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে না। আর যদি সরকারে থাকেন তবে তোফায়েলকে বা অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রিত্ব দিতে হবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী এতো বোকা না, ওনার মতো বুদ্ধিমতী খুব কম আছে রাজনীতিতে। ওনার বিস্তারিত প্রজ্ঞা আছে, উনি জানেন কী করে কাকে হ্যান্ডেল করতে হয়। আমার মনে হয় উনি সংসদ ভাঙবেন, এটা তো ওনাকে মেনে নিতে হবে। না হলে ওনার পিতাকে অপমান করা হবে।

ওনার পিতা ১৯৭৩ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়েছিলেন। সুতরাং নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। আমি নিশ্চিত ওনারা ওইটা মেনে নেবে।

আমি আশাবাদী আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের ভালো চান। আমরা সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সবাই মিলে আমরা বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী পালন করব, ওনি একলা করবেন না আমরা সবাই মিলেই করব।    

নির্বাচনে না গেলে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে বিএনপি, কিন্তু কর্মসূচি শুরুর তো কোন আভাসই নেই ওদিকে ভোটের তো সময় বেশি বাকি নেই এই সময়ে কী আর করা যাবে?

নির্বাচনে যাবে তো তারা। বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। এখন তাদেরকে বলতে হবে জনকল্যাণকর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা সম্ভব তাদের চিন্তা চেতনায় আছে সেইটা। এখন আর ঝগড়াঝাটির কোন জায়গা নেই।

বিএনপি ১৯৯৬ সালে একবার একতরফা নির্বাচন করেছে আবার ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারি আবার বিরোধীদলকে ছাড়া নির্বাচন করতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি এখন সেই বিএনপিই বলছে তাদেরকে ছাড়া নির্বাচন করা যাবে না

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন বিএনপি সঠিক করেছে। কারণ, ওই নির্বাচন না হলে তত্ত্ববধায়ক সরকার আসতো না। ওইটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। অত্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলটা পাস করানোর জন্য ওটা করেছে, ওটা স্বল্পকালীন সরকার গঠন করেছিল দুই মাসের জন্য।

বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলেও তো ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির পাশাপাশি জঙ্গি তোষণের অভিযোগ ছিল আবার বিদ্যুৎসহ সেবাখাতগুলোতে হযবরল অবস্থা ছিল যার উত্তরণে সরকার কিছুই করতে পারে নাই কেন মনে করছেন, সেই তারাই সাফল্য দেখাবে ভবিষ্যতে?

এখানে বুঝতে হবে, আজকে সরকারের যে ভালো কাজগুলো তার সবগুলি শুরু হয়েছিল অতীতের সরকারের সময়ে। আজকে এত ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজে আসে, বিশেষ করে মেয়েদের। এটা এরশাদ সাহেব শুরু করেছিল। খারাপ লোকটা ভালো কাজ করেছিল এবং খালেদা জিয়া সেটা বহাল রেখেছিল। তারপর এই সরকারও সেটা রেখেছে। এটা মনে রাখতে হবে উন্নয়ন হলো ধারাবাহিকতা।

নিশ্চয় বিএনপির আমলে দুর্নীতি হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের দুর্নীতির তুলনায় বিএনপি পকেট মারও না। এরা তো ডাকাত, ওরাতো পকেট মার। সেই জন্য প্রত্যেকটা সংবিধানিক কমিটিতে আমরা নির্দলীয় স্বাধীনচেতা মুক্তমনা লোককে দায়িত্ব দেয়া বিশ্বাস করি। যার ফলে এখানে দুর্নীতি অনেক কমবে। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের বিচার হবে। অন্য কোন জিঘাংসা হবে না, কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হবে না।

আপনি তো নানা সময় বিএনপিকে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন সভা সমাবেশ আর খোলা চিঠিতে আপনার কোনো পরামর্শ তারা নিয়েছে বলে মনে করেন?

তারা আমার পরামর্শ একটু দেরিতে নেয়। যেমন খালেদা জিয়াকে আমি বলেছিলাম, ‘আপনি বকশিবাজারে যাবেন না, আপনি বলেন যে কোর্টে যাব না।’ ওনি আমার বুদ্ধি নেন নাই, বকশিবাজারে গেলেন। এখন যখন ওই কোর্ট জেলের ভেতরে নিয়ে গেল, ওনি কিন্তু এখন আর যান নাই।

এটা যদি ওনি দুই বছর আগে শুনতেন ওনার লাভ হতো। ওনি আমার বুদ্ধি নিয়ে অনেকগুলি ভালো কাজও করেছেন। জেলে যাওয়ার আগে বলেছেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা, এই বুদ্ধিটা আমিই দিয়েছিলাম। আমি বলেছি জিঘাংসা করবেন না, মানুষকে ক্ষমা করতে শিখেন সবাই।

আপনারা তো বর্তমান শাসনের কড়া সমালোচক যদি আপনি সরকারে থাকতেন, তাহলে কীভাবে দেশ চালাতেন?

এই ফ্ল্যাগওয়ালা গাড়ি আমাকে আকর্ষণ করে না। আমি সরকারে থাকব না। আমার এখন একটাই কামনা দেশ শান্তি থাকবে, দেশের মানুষ সবাই ভালো থাকবে। 

মির্জা ফখরুলের জাতিসংঘ সফর নিয়ে তো রসালো আলোচনা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদেরকে জাতিসংঘ মহাসচিব দাওয়াত দিয়েছে কিন্তু গুতেরেস আবার তখন ঘানায় এই বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

এখানে জাতিসংঘ একটা বিরাট সংস্থা। তাদের ওখানে দাওয়াত দিয়েছে বিএপিকে, কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব থাকতে পারে নাই, সেটা দোষের কিছু না। মির্জা ফখরুল এবং আওয়ামী লীগসহ সবার প্রতি আমার পরামর্শ ভারত-টারত, এই মুরব্বিদের দিকে তাকাইয়েন না। জনগণের দিকে তাকান। জনগণই আপনাকে ক্ষমতায় আনতে পারবে, ফেলতে পারবে।

ঢাকটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি