সিনহার মনগড়া কথা মানবো কেন: কাদের

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩১ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

আত্মজীবনীমূলক বইয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাকে পদত্যাগে বাধ্য করাসহ যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো মনগড়া বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিদেশে বসে তিনি (সিনহা) আপন মনে ভুতুড়ে কথা চাপছেন। এটা আমাদের ও দেশের মানুষের বিশ্বাস করতে হবে? এর যৌক্তিকতা নাই।’

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

২০১৭ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলার আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে সিনহার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল। ওই রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে তিনি ছুটিতে যান। সরকারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টোবর তিনি অনেকটা বোমা ফাটিয়ে বিদেশে চলে যান।

‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক বইয়ে সিনহা বর্ণনা করেছেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়েছি এবং তারপর কেন তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।

সিনহা লিখেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষে যায়, সেজন্য তার ওপর ‘সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।’ এজন্য ‘হুমকির মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। আর এই হুমকি একটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়েছিল বলে অভিযোগ তার।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (সিনহা) সাবেক হয়ে গেছেন। সাবেক হওয়ার অন্তর্জ্বালা আছে। কি পরিস্থিতিতে সাবেক হয়েছেন তা সবাই জানে। বই লিখে মনগড়া কথা বলবেন বিদেশে বসে, সেটা নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন আছে? ক্ষমতা যখন থাকে না তখন অনেক অন্তর্জ্বালা গড়ে উঠে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় এখন বইতে যা লিখেছেন, তখন বলার সৎ সাহস একজন বিচারপতির কেন ছিলো না? এখন বিদায় নিয়ে কেন পুরানো কথা নতুন করে বলছেন, যা খুশি তাই বলছেন। এটা হয়, এটা হতেই পারে। এ নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

‘তিনি যদি সত্যই বলতেন, তাহলে যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন বললেন না কেন? সত্য কথা দেশের জনগণের মাঝে এসে বললেন না কেন? এখন বিদেশে বসে আপন মনে ভুতুড়ে কথা চাপছেন। এটা আমাদের ও দেশের মানুষের বিশ্বাস করতে হবে? এর যৌক্তিকতা নাই।’

এ সময় ‘জাতীয় ঐক্য’ নামে আওয়ামী লীগবিরোধী যে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে সে বিষয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘দলে দলে জনে জনে যে ঐক্যের কথা আসছে, এতে করে কি জনমনে কোনো প্রভাব ফেলবে? শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কি কমে যাবে? এদেশে এক সময় ৭৬ পার্টির ঐক্যে হয়েছিল। এটা কি জনমনে কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছে? আমাদের আস্থা আছে, বাংলাদেশের জনমত শেখ হাসিনার পক্ষে রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেতাই নেতাই ঐক্য হলে জনতার মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না। দেশের বর্তমান চিত্র অনুযায়ী এই মূহুর্তে জনমনে কোনো প্রতিফলন হবে না। নেতাই নেতাই ঐক্য, দলে দলে ঐক্য যতই হোক জনগণ প্রভাবিত হবে না। এটাই আমাদের অভিজ্ঞতা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণের মিথ্যা কথা বলে বিএনপি দেশের জনগণকে অপমানিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের। বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিবও তাদের ডেকেছিলেন। কিন্তু পরে জানা গেল, জাতিসংঘের মহাসচিব তাদের আমন্ত্রণ করেনি। এটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। তারা জাতিসংঘের প্রধান ফটকে গিয়ে বারবার অনুরোধ করে, একটা তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এটা আজকে একটা সিরিয়াস প্রশ্ন যে বিএনপি জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছে, প্রতারণা করেছে। এতে দেশের জনগণকে অপমানিত করেছে। গণতন্ত্রকে অসম্মান করা। যাদের জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণ ভুয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণ সেই রকমের ভুয়া।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/টিএ/এমআর