সিনহার বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগের তদন্তে অগ্রগতি নেই

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:২৬

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস

এক বছরেও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে উঠা ১১টি অভিযোগের অনুসন্ধানের বিষয়ে অগ্রগতির খবর নেই। যদিও সিনহাকে টাকা দেয়ার বিষয়ে দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। তবে এরপর কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সংস্থাটি।

সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান বিষয়ে দদুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভূট্টাচার্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনেক আগের বিষয়। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।’  

গত ৬ মে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পরে জানা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন সিনহা।

দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন তারা। পরে ওই টাকা ‘রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একটি বই বাজারে আসলে এ নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়। ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক এই বইয়ে বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। এতে তিনি দাবি করেছেন, সরকারের হুমকির মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন।

আর এই বইটি আসার পর সিনহার বিরুদ্ধে উঠা ১১টি অভিযোগের বিষয়টিও আবার আলোচনায় এসেছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর বিতর্কের মুখে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশ যান সিনহা। বলে যান, তিনি দেশে ফিরবেনই। তবে ১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি।

সিনহা দেশ ছাড়ার পরদিন সুপ্রিমকোর্ট থেকে এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা জানানো হয়। বলা হয়, এসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন।

ওই বছরের ১৩ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তখন বলেন, ‘সিনহার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হবে। ...যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই এন্টি করাপশন কমিশনের আওতায়। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন কে এটার অনুসন্ধান করবে, কে এটা তদন্ত করবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই যে অ্যালিগেশনগুলো, এগুলোর অনুসন্ধান হতে হবে। যদি অনুসন্ধান হয়, তার যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে এটার মামলা হবে। মামলা হলে ইনভেস্টিগেশন হবে। ইনভেস্টিগেশন হওয়ার পরে প্রশ্ন আসবে যে প্রধান বিচারপতির ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

সিনহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল, তার মধ্যে একটি ছিল তার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা হওয়া। টাকাটা জমা করেছিলেন দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।

গত ৭ মে দুই ব্যবসায়ী দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হয়ে জানান, ২০১৬ সালের শুরু দিকে এস কে সিনহার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ছয়তলা বাড়িটি টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শ্রান্তি রায় ছয় কোটি টাকায় কেনার জন্য বায়না করেন। বাড়িটি বায়না করার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ৫৫ লাখ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণের সময় নেওয়া আরো ১ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। এ কারণে বাড়ির মূল্যের বাকি চার কোটি টাকা এসকে সিনহার কাছে পরিশোধ করা হয়।

বাড়িটি কেনেন সিনহার পিএস রঞ্জিতের স্ত্রী শ্রান্তি রায়। আর রঞ্জিন ও শান্তিকে সহযোগিতা করতে এই টাকা দিয়েছেন শাহজাহান ও নিরঞ্জন।

এই জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদকের পক্ষ থেকে এই দুই ব্যবসায়ীর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি। তেমনি সিনহার বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এমএবি/ডব্লিউবি