ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সম্প্রতি ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। এই জ্বরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে এটি নিয়ে ভীতি কাজ করে সবার মাঝে। গত বছর চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি ছিল, আর এ বছর দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ। ডেঙ্গু সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিন থাকে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে এই জ্বর আরো কম সময় ধরে থাকছে।

যেভাবে ছড়ায়

ডেঙ্গুজ্বর কীভাবে ছড়ায় এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের দ্বারা এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে। ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশা কাউকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।’

লক্ষণ

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ডেঙ্গুতে জ্বর আসবে। জ্বর কম হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে। এর সঙ্গে গায়ে ব্যথা হয়। দেখা যায়, জ্বর তিন-চার দিন পর ভালো হয়ে যায়। তবে এরপর প্লেটিলেট কম হতে থাকে। দেখা যায়, মাঝখানে একটি বিরতি দিয়ে আবার জ্বর আসে।’

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাকিল বলেন, ‘এই জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা এবং চোখের পেছনে ব্যথা করবে। শরীর এমন ব্যথা করবে যেন মনে হবে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। জ্বর সাধারণত দুই দিন থাকার পর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় র‌্যাশ দেখা দেবে।’

জ্বরের লক্ষণের প্রসঙ্গে ডা. শাকিল আরো বলেন, ‘যদি জ্বর জটিল পর্যায় হয়, তাহলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, রক্তবমি হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। কারো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আপার অ্যাবডোমিনে বা ওপরের পেটে পানি চলে আসতে পারে।’

এই জ্বরে যেহেতু পানিশূন্যতা বেশি হয়, তাই প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘাম হতে পারে। বমি বমি ভাব হতে পারে, খাবারে অরুচি হতে পারে। অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের যে লক্ষণ, সেগুলো প্রায় সবই ডেঙ্গুজ্বরে থাকবে।’

ডেঙ্গুজ্বরের যে বাহক, তার বায়োলজিক্যাল চরিত্র ও মানুষের বায়োলজিক্যাল চরিত্রের জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ছাড়াও খুব জটিল অবস্থায় চলে যেতে পারে জানিয়ে ডা. শাকিল বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরের স্টেরিওটাইপ চারটি। আগে ঢাকা শহরে যে স্টেরিওটাইপ দুই ও তিন দিয়ে আক্রান্ত হতো। তবে এখন যেটি পাওয়া যাচ্ছে সেটি হলো এক নম্বর। লক্ষণ উপসর্গ একটু আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এর জটিলতা আলাদা। ডেঙ্গুজ্বর যার একবার হয়, তার আবার হলে জটিলতা বাড়ে। চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত একবার হলে আর হয় না। তবে ডেঙ্গু একবার হলেও আবার হতে পারে।’

চিকিৎসা

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘এখন যেহেতু বাংলাদেশে, ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, তাই আমি বলব, জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হতে হবে। রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। তবে জ্বর এলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে বা আতঙ্কিত হতে হবে, তা নয়। ডেঙ্গুজ্বর হলে একটি বিষয় খুব খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো, এ সময় পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রোগী পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছে কি না এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আর প্রেশার কমে যাচ্ছে কি না এটি দেখতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এমআর