দুর্নীতিমুক্ত একটা মন্ত্রণালয় দেখান, প্রধানমন্ত্রীকে বি চৌধুরী

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:০৮ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সারাদেশে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি হচ্ছে দাবি করে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, একটি মন্ত্রণালয় দেখান যেটা ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া চলে।

শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর জোট গড়ার লক্ষ্যে ড কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে।

মেধাবীরা দেশ চালাবে জানিয়ে বি চৌধুরী বলেন, ‘নির্বোধ ব্যক্তিরা কেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবে? দায়িত্বে থাকতে হবে মেধাবীদের, বুদ্ধিমানদের। রাষ্ট্র পরিচালনায় (প্রশাসনে) মেধাবীদেরই গুরুত্ব দিতে হবে। আজকের মেধাবী তরুণ আগামীর ভবিষ্যৎ।’

তিনি কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘তাদের ওপর ছুরি দিয়ে আঘাত করবেন, চাপাতি দিয়ে আঘাত করবেন, গুণ্ডা লেলিয়ে দেবেন; আপনি করেননি, আপনার লোকজন করেছে। এটা লজ্জার বিষয়।’

বিকল্পধারার সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবাদী জাতি, বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশ পাকিস্তানি স্বৈরাচার বরদাশত করেনি, প্রতিবাদ করেছে, এখনও করবে।’

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘শুধু স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ভারসাম্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য বেগবান হতে পারে। আমার পবিত্র স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমার পবিত্র পতাকার বিরুদ্ধে, লক্ষ, লক্ষ মানুষের রক্তে ভেজা, লক্ষ মানুষের চোখের পানিতে ভেজা এই মাটির বিরুদ্ধে যারা ছিল, যারা আছে তাদের সাথে ঐক্য করবো না। আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। সবাই ইতিবাচক স্বপ্নে জেগে উঠতে চাই। স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায় রচনা করতে নয়।’

বক্তব্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকারের প্রতি ১০টি প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন। বলেন, এই সরকারের কাছে জনগণের প্রশ্ন, যে স্বাধীনতা আনতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে, এর মূল্যবোধ কেন পদদলিত?

‘দিন-রাত প্রতিটি ঘণ্টা নিয়ে কেন মা-বোনেরা আতংকে থাকবে? কেনো পুলিশ, র‌্যাব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ছাড় দেবে?’

‘কেন ঘুষ দুর্নীতিকে ‘স্পিড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের?’

‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে কচি-কিশোরদের রাস্তায় নামতে হবে কেন?’

‘কোটা সংস্কারের পক্ষে মেধাবী ছাত্রদের কেন আন্দোলন করতে হবে? মেধাবী ছাত্রদের কী অপরাধ? কেন তাদের গুণ্ডা দিয়ে, হাতুড়ি-চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করা হবে? এজন্যই কি স্বাধীনতা?’

‘আপনাদের অপরাধের প্রতিবাদে কথা বলার জন্য সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি কেন নিতে হবে? অথচ আপনারা যখন-তখন, যত্রতত্র সভা সমাবেশ করতে পারেন।’

‘কেন আমার ভোট আমি দিতে পারবো না? ভোটের অধিকারকে কেনো দলীয়করণ করা হলো? সারা পৃথিবীতে ইভিএম পরিত্যক্ত, ইভিএম কেউ চায় না। কেন আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে?’

‘কেনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয়করণ করা হলো? কেন তাদের সবসময় ভয়-ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে কেন?’

‘স্বাধীন দেশের মা-বোনদের ও শিশুদের ওপর কেন নির্যাতন হচ্ছে?’

‘আমাদের রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কোথায়? কেন গঙ্গার পানি পাবো না? কেন বন্ধু রাষ্ট্র তিস্তার পানি দেবে না?’

সরকারের প্রতি এই ১০ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বদরুদ্দোজা। বলেন, ‘একটি স্বেচ্ছাচারী, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার গত ১০ বছরে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, একই রকম সরকারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি কি?’

‘সংসদ, মন্ত্রিসভা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতেই হবে। না হলে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা যাবে না।’

এর আগে শনিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী গুলিস্তানে  মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে মাহী বি চৌধুরী ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

বিকাল তিনটায় শুরু হওয়া সমাবেশে বিএনপি, ২০ দলের শরিক, যুক্তফ্রন্ট ও বাম সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/জিএম/জেবি)