ধরলেন ওসি ছাড়লেন এসপি

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৩৭

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
প্রতীকী ছবি

এক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউপি চেয়ারম্যানকে শনিবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করেছিলেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেনকে ছেড়ে দেওয়ার পর ওসি আবদুল মোতালেব বলছেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও নেই।

তবে চেয়ারম্যান মোজাহারের ভাষ্যমতে, তার বিরুদ্ধে মামলা আছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। রবিবার তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইবেন।

মামলাটির বাদী আবদুল মজিদের বাড়ি দুর্গাপুরের হাড়িয়াপাড়া গ্রামে। মাস তিনেক  আগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বলে জানান তিনি।

মামলার বাদী জানান, চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি নিজেও আওয়ামী লীগ করেন। তাই চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। গত বছর তিনি চৌপুকুরিয়া গ্রামে চেয়ারম্যানের একটি জমি তিন বছরের জন্য ইজারা নেন পেয়ারা চাষের জন্য। সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় পেয়ারা চাষের জন্য জমিটি ইজারা নেওয়ার শুরুতে চেয়াম্যানকে দেড় লাখ টাকা দেন তিনি। এরপর এক বছরের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধের পর চেয়ারম্যান চুক্তি ভঙ্গ করে দেড় বছরের মাথায় তার জমি দখল করে নেন।

আবদুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমার পাহারাদারকে মারধর করে জমি থেকে তাড়িয়ে দেন। পেয়ারা গাছ কেটে ফেলেন। তাই আদালতে মামলা করেছিলাম। গত ৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এখন তাকে গ্রেপ্তার করে কেন ছেড়ে দিল জানি না।’

তবে চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেন দাবি করছেন তিনি মামলা ও পরোয়ানার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। বলেন, ‘রাত আড়াইটার সময় বাড়িতে পুলিশ আসলো। ওসি মোতালেব আমাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখালেন। দেখলাম, নাম-ঠিকানা সবই ঠিক আছে। আমি বললাম, রবিবারই জামিন নিয়ে থানায় রিকল জমা দিব।’

ওসি তখন তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান। তবে তিনি তা দিতে রাজি হননি।

চেয়ারম্যানের ভাষ্য, ‘ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আমাকে রাজশাহী নিয়ে পুলিশ লাইনে  রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর ওসি এসে জানান, এসপি স্যারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এরপর আমাকে এসপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো।’ সেখান থেকে তিনি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাড়া পান।

তবে গ্রেপ্তার কিংবা টাকা দাবি করার কথা অস্বীকার করে ওসি আবদুল মোতালেব বলেন, ‘এসপি স্যার চেয়ারম্যান মোজাহারকে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছিলেন। এ জন্য তাকে এসপির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কিংবা কোনো মামলা নেই বলেও দাবি করেন ওসি।

চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘চেয়ারম্যানকে কেউ ধরে আনেনি। তিনি নিজেই সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। চেয়ারম্যানের আশঙ্কা, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ও পরোয়ানা থাকতে পারে। কিন্তু আমি এ রকম কিছু পেলাম না।’ পরে তিনি চলে গেছেন।

এর আগে চুরির অপরাধে দুই স্কুলছাত্রকে বেঁধে পেটানোর অভিযোগে চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছর একটি মামলা হয়। এ মামলায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনে আছেন।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/মোআ)