‘জাতীয় ঐক্যে’ বিএনপির অবস্থান কী?

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৪৭ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৫৭

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

বহুল আলোচিত ‘জাতীয় ঐক্যের’ ঘোষণা এসেছে। যেসব দল নিয়ে এই ঘোষণা এসেছে, সেখানে নিশ্চিতভাবেই জনসমর্থনে এগিয়ে বিএনপি। বাকিরা ভোটের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত তলানিতেই। তবে এই ঐক্যে নেতৃত্বে বিএনপিই-এটি বলার সুযোগ নেই।

শনিবার যে অনুষ্ঠানে ঐক্যের ঘোষণা এসেছে, সেটি আয়োজন করা হয়েছে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের আয়োজনে। তার উদ্যোগের নাম জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর তিনি এই উদ্যোগের ঘোষণা দিয়ে আলোচনার সুত্রপাত ঘটান।

ঐক্য ঘোষণারে সমাবেশে সভাপতি হয়ে যান সম্প্রতি আলোচিত হয়ে উঠা যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। প্রধান অতিথি ছিলেন কামাল হোসেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন প্রধান বক্তা।

এই ঐক্যের প্রধান নেতা কে- জানতে চাইলে বি চৌধুরী জাতীয় ঢাকাটাইমস বলেন, ‘আমার জানা মতে এটা ঠিক হয়নি।’

কবে ঠিক হবে?

জবাব আসে, ‘হবে হয়ত। কবে হবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। হলে দেখবেন।’

আপনি নেতৃত্বে থাকবেন, নাকি ড. কামাল হোসেন- জানতে চাইলে যুক্তফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘আমি নেতৃত্বের জন্য লড়াই করছি না। আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। শেষ জীবনে চাই স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করা।’

এক যুগ ধরে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরে থাকা বিএনপি জাতীয় ঐক্যের জন্য মরিয়া প্রায়। তবে ‘জাতীয় ঐক্যের’ ডাক দিয়েছিল সেটি কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার চেয়ে আলাদা যদিও এখন তা এক বিন্দুতে মেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিএনপি বছর দুয়েক ধরেই সরকারবিরোধী বৃহৎ ঐক্যের কথা বলছে। আর গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে আলোচনা শুরু করে দলটি।

আর বিএনপির এই আলোচনা কামাল হোসেনের গণফোরাম ছাড়া শুরু হয় যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আর মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য নিয়ে গঠন নয় যুক্তফ্রন্ট। এটি দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হবে-এমন ঘোষণা দেয়া হয়।

এই জোটে কামাল হোসেনেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় জোটের ঘোষণাকে ভালোভাবে নেননি। আর কামাল হোসেন নেই বলে জোট ছেড়ে দেন কাদের সিদ্দিকী।   

এর মধ্যে তৃতীয় শক্তি হওয়ার বাসনা বাদ দিয়ে বিশেষ করে মান্না ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন বিএনপির সঙ্গে।

এর মধ্যে আবার সক্রিয় হন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ছাড়াও রাজনৈতিক শক্তির বাইরে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী আবার তিন পক্ষকে এক করার চেষ্টা শুরু করে।

আর এই ঐক্যের আলোচনায় ও প্রক্রিয়ায় কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী যতটা গুরুত্ববহ হয়ে উঠেন, বিএনপি ততটা গুরুত্ব পায়নি।

যুক্তফ্রন্ট বিএনপির কাছে তিনশ আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে ছাড়, দুই বছরের প্রধানমন্ত্রিত্ব, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সম্পর্ক ত্যাগের মতো দাবি তোলে। আর বিএনপি ঐক্যের সঙ্গে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

বিএনপি কী ছাড় দেবে-সেই ঘোষণা আসেনি। তবে প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে, কামাল হোসেনকে নেতা মানতে প্রস্তুত বিএনপি। অর্থাৎ, নিজ দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের চেয়ে ছোট দল গণফোরামের নেতা তাদের কাছে বড় হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য ওই জাতীয় দৈনিকের সংবাদের বিষয়ে সরাসরি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি। আবার বিএনপি নেতারা এর কোনো প্রতিবাদও করেনি।

জাতীয় ঐক্যে বিএনপির অবস্থান আসলে কোথায়, প্রশ্ন ছিল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে। জবাবে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা আমাদের জোট নিয়ে আছি, বি চৌধুরী তার যুক্তফ্রন্ট নিয়ে আছেন, ড. কামাল হোসেন গণফোরাম নিয়ে আছেন, আটটি বামদল তাদের মোর্চা নিয়ে আছে। এখন সবাই মিলে জাতীয় ঐক্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়নি। সেখানে তাহলে নেতৃত্বের প্রশ্ন কেন আসবে? জাতীয় ঐক্য হবে আশা করি তখন সেটা দেখা যাবে।’

‘আর যুগপৎ আন্দোলনও তো হতে পারে। অতীতে স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা জোট থাকলেও যুগপৎ আন্দোলন হয়েছে না! তাই জাতীয় ঐক্য নিয়ে কাজ চলছে। এটা শেষ হলে তখন দেখতে পারবেন কে নেতৃত্ব দেয়।’

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি/জেবি)