কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করুন: পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৫৮ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:১৩

নিজস্ব প্রতিবদেক, ঢাকাটাইমস

স্থায়ীত্বের জন্য সড়ক নির্মাণ পদ্ধতি পাল্টে দিতে চান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিটুমিন বা আলকাত্রার বদলে কংক্রিকেটর সড়ক নির্মাণের পক্ষে তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিটুমিনের সড়ক টিকবে না। পানি বিটুমিনের শত্রু। পানির সাথেই আমাদের সবসময় বসবাস। কিন্তু এ কথা বার বার বোঝানোর পরও আপনারা শুনছেন না। আপনারা কারও না করও সঙ্গে মাইন্ডসেট করে রেখেছেন। এখান থেকে বেরিয়ে আসুন’

রবিবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামাল এসব কথা বলেন। জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের।

বাংলাদেশে সড়কের স্থায়িত্বের বিষয়টি নিয়ে বরাবর সমালোচনা হয়। বৃষ্টিবহুল দেশে সড়ক ভেঙে প্রায়ই দুর্ভোগ তৈরি করে। এতে উঠে দুর্নীতির অভিযোগও।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাস্তা তৈরি হয় বিটুমিন দিয়ে। এটা কোনো দেশে নেই। আমি বারবার বুঝাবার চেষ্টা করছি বিটুমিন ব্যবহার না করে কংক্রিটের রাস্তা করার। আমি অ্যাকাউন্টেন্ট। টাকা পয়সার বিষয়টা আমার চেয়ে তো আপনারা ভালো বোঝেন না। খরচের বিয়য়ে আসলে হয়ত বা প্রথমে দিকে কংক্রিটের রাস্তায় খরচ বেশি পড়তে পারে। কিন্তু টেকসই হিসাবে সেই খরচ বিটুমিনের চেয়ে অনেক কম হবে এবং মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে।’

‘কংক্রিট দিয়ে সড়ক করলে প্রথম ১০ বছরে হাতই দিতে হবে না। এরপর পাঁচ বছর পর পর একটু রক্ষণাবেক্ষণ করলে ৫০ বছরেও কিছু হবে না। এই দীর্ঘমেয়াদে সুফল অনেক অর্থ বাচিয়ে দেবে।’  

শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে মানসম্মত সড়ক অবকাঠামো বিনির্মাণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব জিয়াউল ইসলাম, আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম, সওজ এর প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, গবেষক কলামিস্ট আবুল মকসুদ, বুয়েট শামসুল হক এবং নগরপরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

আলোচনায় উঠে আসে দক্ষ জনবলের অভাবের বিষয়টি। বক্তারা বলেন, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পর্যযপ্ত অবকাঠামো নেই। ভৌত এবং অভৌত দুটি অবকাঠামোতেই আমাদের দুর্বলতা রয়েছ।

পরিকল্পনান্ত্রী বলেন, ‘গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সমস্যা সমাধানে প্রথমে করতে হবে একটি সঠিক নকশা।...২০ বছর মেয়াদী রাস্তা নির্মাণ করতে পারে এমন ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। এর ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।’

দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে কামাল বলেন, ‘তার আগে সড়ক ঠিক করতে হবে। কেননা একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হওয়ার পূর্বশর্ত হলো উন্নত যোগযোগের ব্যবস্থা।

কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, ভালো মানের সড়ক নির্মাণের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকতে হবে, দূরদৃষ্টি থাকতে হবে, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, সংসদ সদস্যদের উচ্চা থাকতে হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, সড়কের স্থায়ীত্বের জন্য গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন বহনের প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে। সেই সঙ্গে ভেঙে গেলে দ্রুত মেরামতের পরামর্শ দেন তিনি।

‘আজও শুনলাম পাথর বোঝাই ট্রাকের কারণে বেইলি ব্রিজ ভেঙে গেছে। সে ট্রাক ওভার লোডেড ছিল।...রাস্তা হচ্ছে সেটার মেইন্টেইনেন্সের বিষয় চিন্তা করা হচ্ছে না। রাস্তা তৈরির পর দেখা যায় ছোট একটা গর্ত হচ্ছে, সেখানে থেকে আস্তে আস্তে বড় গর্ত। তারপর সেটা ঠিক করতে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। এভাবে ছয় মাস চলে যায়।’

ঢাকা–চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে করার উদ্যোগে প্রশংসা করেন এই বিশেষজ্ঞ। বলেন, ‘ভারতে সড়কের দুই শতাংশ এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু এ সড়কদিয়েই ৪০ শতাংশ পণ্য পরিবহনে সরবরাহ করা হয়।’

সড়কের পাশাপাশি রেল ও নৌপথের উন্নয়নে পরামর্শও দেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। বলেন, ‘কার্গো কেন রাস্তায় চলবে? সেটা যাবে রেলপথে। কন্টেইনার যেন চেল পথে আনা নেয়া হয় তার জন্য ইনসেটিভ দেয়া যায়। অপরপক্ষে সড়কে নিলে চার্জ নেয়ার প্রচলন করা যায়।’

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আমাদের যে রাস্তা আছে সেগুলোর বিন্যাস ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। মানুষকে আনন্দদায়ক হাঁটার জায়গা দিতে হবে।’  

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/জেআর/ডব্লিউবি)