‘ঐক্য বিএনপির সঙ্গে, ২০ দল নয়’

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:১৬

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশ থেকে বৃহত্তর যে ঐক্যের ঘোষণা এসেছে, সেখানে স্বাধীনতাবিরোধী নেতার দলের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে নতুন ব্যাখ্যা এসেছে গণফোরামের পক্ষ থেকে। দলটির মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়তে যাচ্ছেন, তাদের কোনো শরিক দলের সঙ্গে নয়।

বছর দুয়েক আগে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বান জানান। আর বিএনপি সরকারবিরোধী যে ঐক্য গড়তে চাইছে, তাকে তারা বলছে জাতীয় ঐক্য। এই দুই ঐক্যচেষ্টা এক বিন্দুতে মেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে শনিবার। সেদিন ড. কামাল হোসেনের ডাকে সমাবেশে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দেয়া যুক্তফ্রন্ট, বিএনপি, তার বেশ কয়েকটি শরিক দলের নেতারা এক মঞ্চে বক্তব্য দেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিএনপির যেসব দাবি রয়েছে, সেগুলোই সামনে এনে বক্তব্য রাখেন সবগুলো দলের নেতারা। আর ১ অক্টোবর থেকে একযোগে কর্মসূচির ঘোষণাও এসেছে।

এই ঐক্যের আলোচনা যবে থেকে শুরু হয়, সেদিন থেকে বলা হচ্ছিল, স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো সমঝোতা হবে না। তবে শনিবারের সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে সাজা পাওয়া মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের দল খেলাফত মজলিসের উপস্থিতি এই ঘোষণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

আবার যুক্তফ্রন্টের প্রধান দল বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করা বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের একজন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনিও আত্মসমর্পণ করেন আর যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারত নেয়া হয় তাকে। পরে ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান।

আবার স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি সম্পর্ক রাখবে না-এমন কোনো ঘোষণাও আসেনি। আর এই সিদ্ধান্ত বিএনপি নিতে যাচ্ছে-তেমন আভাসও নেই। 

তাহলে কি স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে দেয়া ঘোষণা থেকে গণফোরাম সরে এসেছে?- প্রশ্ন ছিল দলের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টুর কাছে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘না, তা হবে কেন? জামায়াতকে সাথে নিয়ে আমাদের কোনো ঐক্য হবে না। শনিবারের সমাবেশে বিএনপির সাথে আমাদের কথা হয়েছে, ২০ দলীয় শরিকদের কারো সাথে আমাদের কথা হয় নাই। তবে শরিকদের মধ্যে কেউ কেউ এসেছিলেন।’

মন্টু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের অগণতান্ত্রিক কোনো শক্তির সাথে আমাদের ঐক্য হবে না। আগামীতে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মুক্তিযুদ্ধের শক্তির সাথে আমাদের ঐক্য হবে।’

বিএনপি যদি জামায়াতকে না ছাড়ে তাহলে এই ঐক্য কীভাবে হয়- এমন প্রশ্নে মন্টু বলেন, ‘বিএনপি জামায়াত না ছাড়লে কী হবে? তারা তো নির্বাচনে আসতে পারবে না। জামায়াতের তো নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তাছাড়া ২৩ দফার ভিত্তিতে যে আওয়ামী ঐক্য করেছিল। সেখানে স্বৈরাচারকে নিয়েই তো আওয়ামী লীগ ঘর করছে। আমরা তো জামায়াতের সাথে ঘর করিনি। তারাই বিভিন্ন সময়ে তাদের আশ্রয় প্রচ্ছয় দিচ্ছে। যাক সেসব কথা আর নাই বলি। তবে জামায়াতকে সাথে নিয়ে আমাদের কোনো ঐক্য হবে না।’

ঐক্যের আলোচনায় আরেক আলোচিত নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেখুন, এই বিষয়টি নিয়ে কাল থেকে অনেক বার বলেছি, বক্তৃতায় বলেছি। আর কত? আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কাউকে আমাদের ঐক্যের মধ্যে নেব না। আর জামায়াতকে নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের ঐক্য হবে না।’

শনিবারের সমাবেশে অবশ্য ঐক্য হবেই-এমন কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে এক বৃত্তে মেলার ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে। কবে নাগাদ এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণা আসবে-এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘আমাদের বৃহত্তর ঐক্যের প্রথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। এই ঐক্য বেশিদূর আগায়নি, আমরা আবার একসাথে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নেব।’

‘আমাদের এই ঐক্যের মূল উদ্দেশ্য হলো একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একমত হয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি/জেবি)