সব দুর্নীতিবাজ এক হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিএনপিসহ ‘দুর্নীতিবাজদের’ নিয়ে কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকার উৎখাত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘তারা বড় বড় কথা বলে। তারা কী পারবে উন্নয়ন করতে? তারা তো লুটে খাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ হিলটন মিডটাউন হোটেলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতেই তথাকথিত জাতীয় ঐক্য হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের পতন ঘটাতে দুর্নীতিবাজরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নিজেদের অপকর্মের ফল পাচ্ছে বিএনপি। আদালতে নিজেদের নিরাপরাধ প্রমাণ করাও তাদেরই দায়িত্ব। জনগণ তাদের ভোট দিলে, আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি নেই।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়ের মধ্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ‘যুক্তফ্রন্ট’ এবং ড. কামালের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে নাগরিক সমাবেশ করে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসা বিএনপির নেতারাও ওই সমাবেশে যোগ দেন।

ওই সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কামাল হোসেনের পাশেই বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমেদ এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টর মইনুল হোসেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তুলে ধরে যুক্তফ্রন্ট ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বলেন, ‘আমাদের অপরাধটা কী? দোষটা কী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? কী কারণে? কী কাজটা করিনি দেশের জন্য?’

‘এরা সব এক জায়গায়। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ খুনী। এভাবে সব আজকে এক জায়গায়। এই সমস্ত দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা লড়াই করবেন? কামাল হোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে।’

বদরুদ্দোজা-কামালদের সমাবেশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেনের উপস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সাথে গেছেন মইনুল হোসেন। সে আবার কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করে; সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে। সাজু হোসেন ভার্সেস রাষ্ট্র। সে মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত।’

অন্যদিকে ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে দখল নেওয়ার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে হাসিনা বলেন, ‘তারা সবগুলো এখন এক জায়গায় হয়েছে।’

ভাষণে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। কারণ এমডির পদ ছাড়লে তো গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা মারা যাবে না।’

‘সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’

সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এতে কারওর উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। সাংবাদিকরা নিজেদের স্বার্থেই এনিয়ে সমালোচনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ইলেকশনের আগে আমার তো আর আসার সুযোগ হবে না। তাই আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে যাচ্ছি।’

‘উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। দেশের বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত করেছে সরকার। একইসাথে, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে ৫.৪ শতাংশে। সুতরাং, দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করা উচিৎ।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের (যুক্তরাষ্ট্র) সাথে যা কথা হচ্ছে, ডাইরেক্ট ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক আসতে পারব।’

স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৮টা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত রয়েছেন ডা. দীপু মনি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/ডিএম