কেউ খোঁজ রাখেনি মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মা’ ইছিমন বেওয়া'র

আবু বক্কর সিদ্দিক, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
 | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:১৯

গাইবান্ধার সুন্দরগগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচীয়া মীরগঞ্জ বালাপাড়ার প্রবীণ বৃদ্ধা ইছিমন বেওয়া। আনুমানিক বয়স একশ ২২ বছর। তার নয় সন্তানের মধ্যে ছয় সন্তান মারা গেছেন ৭০থেকে ৮৫ বছর বয়সে। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছিলেন ইছিমন বেওয়া। রান্না করে খাইয়েছেন। দিয়েছেন মাতৃস্নেহ। তিনি এখন নিজে শয্যাশায়ী। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে ছোট্ট টিনের চালায়।

স্থানীয়রা জানায়, ইছিমন রেওয়ার স্বামী তমিজ উদ্দীন মারা যান একশ ৫ বছর বয়সে মারা প্রায় ২০ বছর আগে। মরহুম তমিজ উদ্দীন- ইছিমন বেওয়া দম্পত্তির ৬ ছেলে ও তিন মেয়েসহ মোট ৯ সন্তান। স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজ সন্তানদের তেমন কোন খোঁজখবর না রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে আগলে রেখেছিলেন তিনি।

রান্না করে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব ধরণের সহযোগিতা করেছেন তিনি। যুদ্ধে জয়ী হতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকবাহিনী ও পাকবাহিনীর দোসরদের অবস্থানের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন তিনি। পাড়া-পড়শী ও তার সন্তানেরা এসব ঘটনার বর্ণনা এই প্রতিবেদককে দিচ্ছিলেন এই প্রবীণ বৃদ্ধার সামনে।

আর তা শুনে তার দুই চোখে পানি ঝড়ছিল ইছিমন বেওয়ার। তিনিও বলতে চান সেই মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত ইতিহাস। কিন্তু, বলতে পারছিলেন না।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবীণ এই দেশপ্রেমী বৃদ্ধা ইছিমন বেওয়াকে গত পাঁচদিন ধরে দেখতে না পেয়ে তার বাড়িতে খোঁজখবর নিতে যান। গিয়ে দেখেন প্রবীণ বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে (ইছিমন বেওয়াকে) বয়স্ক ভাতা কার্ড দেয়া হয়েছে। তিনি পারিবারিক পর্যায়ের সব কিছুই জানেন। খোঁজখবরও রাখেন।

বৃদ্ধার জীবিত একমাত্র ছেলে আবুল হোসেন, ভাগ্নে, নাতিসহ স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান খোঁজখবর ঠিকই রাখেন। অনেক বড় পরিবার। তার মাঝে বার্ধক্যজনিত কারণে কাজ করতে পারেন না ছেলেও। অভাবের সংসারে চিকিৎসা করার টাকা নেই। নেই দেখাশুনার লোকও।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দেখা গেল গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন সিএলপি বাঁধের রাস্তার ধারে বসবাসকারী বৃদ্ধার দ্বিতীয় ছেলে নুরুল ইসলাম ভুগছেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে।

ইছিন বেওয়ার আত্মীয় স্বজনরা জানান, মরহুম তমিজ উদ্দীন- ইছিমণ বেওয়া দম্পত্তির সন্তানদের মধ্যে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান প্রথম ছেলে নূর হোসেন, দ্বিতীয় ছেলে নুরুল ইসলাম (৮১) বার্ধক্যজনিত কারণে তিনিও অসুস্থ হয়ে নিজ গৃহেই শয্যাশয়ী। তিনি থাকেন আলাদা বাড়িতে।

তৃতীয় সন্তান হালিমা বেগম (৭৯) থাকেন স্বামীর বাড়িতে। তিনি অনেক আগেই বিধবা হয়েছেন। চতুর্থ সন্তান খয়রন নেছা ৭৫ বছর বয়সে কিছু দিন আগে মারা গেছেন।

পঞ্চম সন্তান নুরুজ্জামান (৭১) মারা গেছেন ২০০৮ সালে। তারপর মারা যান ৬ষ্ঠ সন্তান জাহানারা বেগম ৬৯ বছর বয়সে।

সপ্তম সন্তান আবুল হোসেন (৬৭) একটু চলাফেরা করতে পারেন। ৮ম সন্তান নূরুল হক। তিনি এ বছর মারা গেছেন। আর নবম সন্তান মহুবর রহমান জীবিত রয়েছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন। তাই, তার অবদান রয়েছে অনেক। তাকে সহযোগিতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ইছিমন বেওয়া ও তার স্বামী সংসার জীবনে প্রতিদিন দিন সকালে পান্তা ভাত, বিচি কলা আর রসুন। এমনটাই জানালেন চেয়ারম্যান আমিনুল।

(ঢাকাটাইমস/২৫ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :