আরও দুর্গন্ধ ছড়াবে, সিনহা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৪ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:২১

নিজস্ব প্র‌তি‌বেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে তখন বেঞ্চের অন্য বিচারপতিদের বসতে না চওয়ার কারণ প্রকাশ পেলে আরও দুর্গন্ধ ছড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, তাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

আজ মঙ্গলবার  সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সিনহার ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিচারপতি সিনহা যা করছেন এটা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উনি নিজেই নষ্ট করছেন।’

‘প্রধান বিচারপতি থাকার সময় উনার সঙ্গে যারা বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন, তাদের সম্পর্কে কোনো রকম কটূ মন্তব্য করা বা বাজে কথা বলা খুবই অগ্রহণযোগ্য এবং এই কাজটা করে উনি নিজেই বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’

এই সরকারের আমলে অনেক বিচারপতি কাজ করে গেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রের এই প্রধান কৌঁসলি বলেন, ‘এদের কেউ তো সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। উনি তো (এস কে সিনহা) স্পষ্ট করেননি, কেন ওনার সঙ্গে সহকর্মী অন্য বিচারপতিরা একসঙ্গে বসতে চাননি। সেগুলো তিনি যদি উল্লেখ করেন, তবে দুর্গন্ধ আরও ছড়াবে। সেগুলোতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।’

বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে নিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী গত অক্টোবরে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। আর এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংসদ, শাসন ব্যবস্থা, রাজনীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন সে সময়ের প্রধান বিচারপতি সিনহা।

এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটিতে বিদেশে যান সিনহা। নভেম্বরে ফিরে তার দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি না ফিরে সিঙ্গাপুর দূতাবাস থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

সিনহা দেশের বাইরে যাওয়ার পর দিন সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, বিদেশে অর্থপাচারসহ ১১টি ‘গুরুতর’ অনিয়মের অভিযোগের কথা জানানো হয়। আর এসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তার সঙ্গে এজলাসে বসতে রাজি হননি।

সম্প্রতি সিনহা তার আত্মজীবনীমূলক বই অ্যা ব্রোকেন ড্রিমে দাবি করেছেন, তিনি চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগকে বানোয়াটও দাবি করেন তিনি।

সিনহার সঙ্গে অন্য বিচারপতিরা একই এজলাশে বসতে না চওয়ার কারণ জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা যা জেনেছি কাগজ পড়ে জেনেছি। কোনো বিচারপতির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলিনি। ওনার সঙ্গে অন্য বিচারপতি সহকর্মীরা বসতে অস্বীকৃতি দেখিয়েছে। এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও ঘটেছে কি না জানি না!’

সাবেক প্রধান বিচারপতির বইটিতে যদি বর্তমান বিচারপতিদের সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়ে থাকে এবং তারা (বিচারপতিরা) যদি মনে করেন তবে তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে মন্তব্য করেন অ্রাটর্নি জেনারেল। বইটি বিস্তারিত পড়ে এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে চান না তিনি।

বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তার আইনজীবীদের করা রিট প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যে রিট ছিল সেটা আদালত আমাদের ছুটির (আদালতের অবকাশ শেষে) পরে ১ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন। ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার সর্বাত্মক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাঁচজন চিকিৎসক দেখে এসেছেন, তারা টেস্ট করিয়েছেন। তবে তিনি বিশেষ কাউকে দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে চাইলে সে বিষয়ে আইজি প্রিজন রাজি আছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রাইভেট জায়গায় চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘একটি জেলা শহরে কোনো রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকলে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে সব ধরনের চিকিৎসার সুবিধা আছে।’

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর বিষয় আইনে কী আছে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমার বক্তব্য হলো, আইনে এমন কোনো বিধান নেই প্রাইভেট হাসপাতালে তার চিকিৎসা করাতে হবে।’

এদিকে শহীদুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া ডিভিশন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে তা স্থগিত চেয়ে করা আবেদন বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ইতিমধ্যে তাকে ডিভিশন দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আপিলে আমরা যাচ্ছি অন্য প্রশ্নে, এভাবে হাইকোর্ট আদেশ দিতে পারে কি না। কেননা, এতে একটি পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সবাই এভাবে রিট করে ডিভিশন নিয়ে নেবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫‌সে‌প্টেম্বর/এমএ‌বি/মোআ)