তৃপ্তির গ্রেপ্তারেও খুলল না আফতাব হত্যা মামলার জট

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৫৯ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:০৮

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
গ্রেপ্তার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মফিদুল হাসান তৃপ্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজ ঘরে ঢুকে কারা অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন আহমেদকে খুন করেছে, সেটি ১২ বছরেও বের করতে পারল না পুলিশ। এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা পাল্টেছে ১২ জন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুতেই।

হত্যার এক যুগ পর গত ৮ আগস্ট এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মফিদুল হাসান তৃপ্তি। ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হাসান ইমনসহ কয়েকজনের জবানবন্দিতে এসেছিল তৃপ্তির নাম। 

পুলিশকে সন্দেহভাজনক আসামিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা ‘হাওয়া ভবনে’ আফতাব হত্যার টাকা লেনদেন হয়। আর এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃপ্তিও।

তবে সাবেক এই সংসদ সদস্যের কাছ থেকেও পুলিশ উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছেন সিআইডির একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, গত ৮ আগস্ট গ্রেপ্তার তৃপ্তিকে রিমান্ডে পাওয়া গেলে কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারত। কিন্তু তাদের আবেদন নাচক করে তৃপ্তিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক। এ কারণে তার কাছ থেকে কিছু বের করা যায়নি।

২০০৬ সালে বিএনপি শাসনামলের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপককে হত্যার ঘটনাটি ছিল তুমুল আলোচিত। কিন্তু চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলার মতো এই এখানেও খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে আটটার দিকে ফুলার রোডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারের চতুর্থ তলায় নিজ বাসায় অধ্যাপক আফতাবকে গুলি করা হয়। তিন দিন পর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এরপর স্ত্রী নুরজাহান শাহবাগ থানায় মামলা করেন। স্বামী হত্যার বিচার না পাওয়ার হতাশা নিয়ে ২০১৫ সালে তিনি পৃথিবী ছেড়েছেন। বাদীর মৃত্যুর পর তার স্বজন, সহকর্মী বা বিভাগের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) শিক্ষার্থীরা কেউ এ মামলা নিয়ে কেউ সোচ্চার নন।

আফতাব আহমদ বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বই লিখতে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও নিয়েছিলেন বলে সে সময় প্রচার ছিল। তবে পরে কোনো কারণে সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয় এবং তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সরকারের সমালোচনাও করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তার খুনের বিষয়টিতে সরকারের একাংশের বিরাগভাজন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তখন আলোচনা শুরু হয়।

মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন। এর দায়িত্বে রয়েছেন পরিদর্শক সুব্রত কুমার। যদিও এই মামলা নিয়ে কথা বলতে মানা করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই হত্যার জন্য সিআইডির সন্দেহের তালিকায় আছেন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত তানভীরুল ইসলাম জয়। তিনি ভারতে পলাতক। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার এবং ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। 

ভারত থেকে ফেরত আনা শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ২০০৮ সালে এ হত্যার ঘটনায় নিজেকে না জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেছে, তিনি ভারতে অবস্থানকালে তানভীরুল ইসলাম জয়ের সহযোগী কাঁকন ও ল্যাংড়া তাজগীর তাকে বলেছিলেন, জয় ও তার লোক আবলান, রফিক, এতিম বেলাল, খোকন ও মাহবুব এই হত্যায় জড়িত। আবলান, রফিক ও এতিম বেলাল বাসায় গিয়ে আফতাবকে গুলি করেন।

এদের মধ্যে খোকন ২০০৬ সালে রমনায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন, আবলান ২০০৮ সালের নভেম্বরে মোহাম্মদপুরে খুন হন। রফিক, এতিম বেলাল ও মাহাবুবের পুরো ঠিকানা পাওয়া যায়নি।

২০০৮ সালের আগেই সোয়েব সাইফ এবং আরও দুই সন্দেহভাজন হুমায়ুন কবীর মুন্না ও সালেহ আহম্মদ সুজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা এ বিষয়ে তেমন কিছু বলেননি। তারা বর্তমানে জামিনে।

জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার এনামুল কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই মামলায় বিএনপি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি এখন জেলে রয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিদের জবানবন্দিতে তাঁর নাম এসেছে। আরো কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হলে এই মামলার তদন্ত শেষ হবে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এএ/ডব্লিউবি