পাইলটের দক্ষতায় বাঁচল ইউএসবাংলার ১৭১ আরোহী

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:১৯ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দের মতোই আরও একটি প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু ইউএস বাংলার হাওয়াই জাহাজের পাইলটের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তায় প্রাণে বাঁচেন ১৭১ জন যাত্রী ও ক্রু।

বুধবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারের পথে রওনা হয়ে ইউএস-বাংলার যে উড়োজাহাজটি যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করেছে, সেটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার চেষ্টা করেছে একাধিকবার বার।

কিন্তু নোজ হুইল গিয়ার কাজ করছিল না। এরপর ক্যাপ্টেন জাকারিয়া বিমানটিকে নিয়ে আসেন চট্টগ্রামে।

বুধবার বেলা আনুমানিক দেড়টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারের পথে যাত্রা শুরু করে ফ্লাইটটি। আর দুপুরের পর চট্টগ্রামের আকাশে কয়েকবার চক্কর দিয়ে হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, উড়োজাহাজটি যখন চট্টগ্রামের আকাশে উড়ছিল তখন সেটি ক্রাস ল্যান্ডিং করে কি না, এ নিয়ে ভীত হয়ে পড়েন তারা।

তবে নোজ হুইল গিয়ার অকেজো থাকা অবস্থায় পাইলট পেছনের চাকাগুলোর ওপর ভর করে উড়োজাহাজটির অবতরণ করেন।

এ সময় বিমানটির সামনের অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আগে থেকেই তথ্য জানিয়ে রাখা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসকে। ফলে তারাও প্রস্তুত ছিল পুরোপুরি। বাহিনীটির অন্তত পাঁচটি ইউনিটের কর্মীরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

যাত্রীরা ছিল ভীত

ফ্লাইটটিতে থাকা কক্সবাজারের একজন যাত্রী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যাত্রীরা সবাই আতঙ্কে ছিল। যে যার আসনে লাইফভেস্ট পরে মাথা নিচু করে ছিলাম। চট্টগ্রামে বিমানটি যখন রানওয়েতে নামলো টের পাচ্ছিলাম, খুব ঘর্ষণ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সবকিছু ভেঙে যাচ্ছে।’

‘তীব্র পোড়াগন্ধ নাকে লাগছিল। এক পর্যায়ে উড়োজাহাজটির গতি থেমে গেলে দ্রুত র‌্যাফটগুলো (ইমার্জেন্সি এক্সিট) খুলে দেওয়া হলে আমরা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে উড়োজাহাজটি থেকে নেমে আসি।’

ইউএস বাংলার ব্যাখ্যা

দুপুরে ইউএস-বাংলা জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পূর্বমুহূর্তে পাইলট জরুরি অবতরণের প্রয়োজন অনুভব করেন। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রামে হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ফ্লাইটে থাকা ১১ শিশুসহ ১৬৪ জন যাত্রী এবং সাত জন ক্রু সবাই নিরাপদে উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে এসেছেন বলেও নিশ্চিত করে ইউএসবাংলা।

ইউএসবাংলা নিয়ে বিমানযাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি রয়েছে গত মার্চে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায়। সেই দুর্ঘটনায় ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর আগেও নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যান্ত্রিক গোলযোগে উড়োজাহাজের জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটে।

২০১৪ সালে ১৭ জুলাই দুটি ড্যাশ এইট-কিউ ফোর হান্ড্রেড এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা থেকে যশোরে উদ্বোধনী ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ইউএস-বাংলার যাত্রা শুরু হয়।

বেসরকারি বিমান সংস্থাটি সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, গুয়াংজু, মাস্কাট, দোহা ও কলকাতাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে অভ্যন্তরীন রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/ডিএম/ডব্লিউবি