সাংবাদিক জীবনের স্মৃতিচারণ প্রধান বিচারপতির
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচারপতি হওয়ার আগ পর্যযন্ত সাংবাদিকতা করেছেন কয়েক বছর। আর আইন সাংবাদিকতা বিষয়ে এক কর্মশালায় সাংবাদিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে বুধবার কর্মশালাটি হয়। এর শিরোনাম ছিল ‘লিগ্যাল এইড ও আইন সাংবাদিকতা’।
সুপ্রিম কোর্টের সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালায় আইন ও আদালত বিটের ৭০ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি ‘সংবাদ’ পত্রিকায় ছিলাম। বিচারপতি এম এ আজিজ (সাবেক সিইসি) সাহেব আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। উনার বন্ধু ছিল সংবাদের তখকার সম্পাদক বজলুর রহমান সাহেব। আমি তখন অনেক ব্যস্ত আইনজীবী।”
“বিচারপতি এমএ আজিজ সাহেব বললেন যে, ‘আমি কথা দিয়ে ফেলেছি বজলুর রহমান সাহেবকে, কিছু দিন সাংবাদিকতা করেন’। আমি সাংবাদিকতা শুরু করেছি।”
“তখন আমরা কাজ করেছি তখন বর্তমান আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম তখন আমাদের সভাপতি ছিলেন। আমি আবার কোনো অফিস বেয়ারার ছিলাম না। আমাকেও থাকার জন্য বলেছিলেন। আমি বলেছি, ‘আমি থাকতে পারব না। আমি আমার প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকব। আমি আপনাদের সাথে আছি’।”
মাহমুদ হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিচার চলাকালে বিভিন্ন বিচারপতি যখন বিব্রতবোধ করেছেন, তখন তিনি সেগুলো পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে লিখেছেন।
‘বিভিন্ন আদালতে যাচ্ছে, বিভিন্ন আদালত বিব্রত হচ্ছে। এগুলোই তখন ছিল হট নিউজ। নিদেনাবাগ হত্যাকাণ্ড মামলায় ডেথ রেফারেন্সের রিপোর্টও করেছি।’
সাংবাদিকদের প্রতি পরামর্শ
আদালতের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে সাংবাদিকদেরকে পরামর্শও দেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘আপনারা কিন্তু কোর্টে জজ সাবেহরা কী কথা বলে সেটাও কিন্তু আপনারা লেখে দেন। কিন্তু কোর্টের যেটা রেকর্ডে আছে কি না সেটা রিপোর্ট করা উচিত।’
‘আমরা যেই কথা বলি সেই কথা অনেক সময় সংবাদপত্রে লেখা হয়। এটা নিয়ে দুই একবার সাংঘাতিক হুলস্থুল হয়েছে সারাদেশে। নিশ্চয় আপনারা জানেন আমি কোনটাকে ইঙ্গিত করেছি। এটা নিয়ে সাংঘাতিক হৈচৈ হয়েছে। জজ সাহেব কিন্তু অন রেকর্ড কিছু লেখে নাই। উনি যা বলেছে মৌখিকভাবে বলেছিলেন। এটা আপনারা হুবুহু লিখে দিয়েছেন। তারপর সারাদেশে তুলকালাম কাণ্ড।’
“জজেরা অনেক সময় অনেক কথা ‘কথার ছলে’ বলে ফেলে। সুতরাং এইসব কথা কতটা রিপোর্ট করবেন, আমার মনে হয় যে, যেটা অনরেকর্ড সেটাই করা উচি।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সাংবাদিকদের একটা দায়িত্ব আছে। আর কোর্ট সেনসিটিভ জায়গা। এখন মানুষের বিরাট আকর্ষণ কোর্ট রিপোর্টিং। আমার মনে হয়, মানুষ কোর্ট রিপোর্ট যত যত্নসহকারে পড়ে অন্য কোনো রিপোর্ট এত যত্নসহকারে পড়ে না।’
‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, জজ সাহেবরা যে বিভিন্ন কথা বলে, এগুলো লেখার সময় আপনারা যদি একটু কেয়ারফুল হন। এ ব্যাপারে আমি আপনাদের অনুরোধ করব।’
হাইকোর্টের বিভিন্ন কোর্টে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার না দেয়ার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা আমি দেখব। কারণ বিদেশেও কিন্তু প্রত্যেক কোর্টে সাংবাদিকদের বসার জয়গা থাকে।’
বাংলাদেশে বিচারপতিরা অনেক সময় অনেক কথা বললেও বিদেশে জজরা সেটা করেন না বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।
‘আমি ইংল্যান্ডে দেখেছি, ওইখানে আমি হাইকোর্টে দেখেছি, রেগুলার আমার কোর্ট অ্যাটেন্ডেন্স ছিল। ওইখানে আমি দেখেছি জজ সাহেবরা কোনো প্রশ্ন করে না। কোনো আরগুম্যান্ট করে না।’
দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে আটক বা অর্থাভাবে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারছে না- এমন ঘটনা অনুসন্ধান করে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন মাহমুদ আলী।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাঈদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদ।
কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেইলি অবজারভার পত্রিকার অনলাইন সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। কর্মশালা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব টাইটাস হিল্লোল রেমা।
(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এমএবি/ডব্লিউবি)