জামায়াত ছেড়ে ঐক্যে কী লাভ, হিসাব কষছে বিএনপি

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০৭ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০৭

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
২০ দলের বৈঠক (ফাইল ছবি)

গণফোরাম আর যুক্তফ্রন্টকে পাশে পেতে বিএনপি কি প্রায় দুই দশকের মিত্র জামায়াতকে ছেড়ে দেবে? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় হয়ে উঠেছে। তবে অপেক্ষার খেলায় বিএনপি।  

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দেয়া তিন দলের জোট যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য গড়তে মরিয়া বিএনপি। একে তারা বলছে ‘জাতীয় ঐক্য’।

এই ঐক্য গড়তে কামাল হোসেন এবং বিএনপির আশাবাদী। তবে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী শর্ত দিয়েছেন, জামায়াত ছাড়তে হবে বিএনপিকে।

কিন্তু হিসাব কষে বিএনপি নেতারা বলছেন, এই জোটের চেয়ে জামায়াতের সঙ্গে বেশি ‍গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের ভোট আছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক, যেটি নেই গণফোরাম আর যুক্তফ্রন্টের।

তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দোটানায়। না পারছে তারা জামায়াত ত্যাগ করতে, না পারছে আলোচনা বন্ধ করতে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যে জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া চলছে তার মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হলে ভোটের হিসাবটা খুব জরুরি। তাই যে যাই মন্তব্য করুন তা বুঝেশুনে করা উচিত। কেউ যদি মনে করে বিএনপিকে ঘাড় নীচু করে কারও সঙ্গে ঐক্য করতে হবে তারা এমন কথা বলতে পারে। কিন্ত জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হলে ব্যক্তিগত রাগ অনুরাগের বাইরে এসে কথা বলতে হবে।’

যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে জামায়াত নিয়ে যেসব বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে বুধবার রাতে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা। সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শরিক দলগুলোর সঙ্গে তারা বসছেন।

তবে এর মধ্যে জামায়াত সম্প্রতি বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। গত ২৯ আগস্টের সেই অনুষ্ঠানে জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অতীতের মতো আগামী দিনের সকল আন্দোলনেও জামায়াত ২০ দলীয় জোটের পাশে থাকবে।’

বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ একটি দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জোটের মধ্যেও এমন কোনো আলোচনা হয়নি যে জামায়াত ছেড়ে দেবে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতও বলে দিয়েছে তারা আগামী দিনে বিএনপি তথা জোটের সঙ্গে থাকবে। আর বিএনপিও এমন সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না।’

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা ঐক্য চাই। যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে তারাও ঐক্য চায়। সেখানে এমন কড়া শর্ত আরোপ করা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখা উচিত। কারণ শান্তি চাই, সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।’

জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘তাদের তো নিবন্ধন নেই। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তিও পেয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে জোটে আছে। তাদের বাদ দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত তো হয়নি।’

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে জোট করে বিএনপি। পরে এরশাদ জোট ছেড়ে দিলে তার দলের একাংশ বিজেপি নামে জোটে থেকে যায়।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ভোট যোগ হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি অভাবনীয় জয় পায়। তবে ২০০৮ সালে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করে বিএনপি।

আবার ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গণফোরাম গঠন করেন কামাল হোসেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেননি। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসনে দাঁড়িয়ে হারান জামানত। আর ভোটমুখো হননি তিনি।

অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ২০০১ সালে বিএনপি জিতে আসার পর তাকে বানায় রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই অসম্মানজনকভাবে পদ ছাড়তে বাধ্য করে তাকে। ২০০৪ সালে গঠন করেন নিজের দল বিকল্পধারা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বি. চৌধুরী ঢাকা-৬ আসনে দাঁড়িয়ে হারান জামানত। তিনি বিএনপির হয়ে মুন্সীগঞ্জের যে আসনে জিতে আসতেন, সেই আসনে তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী হন তৃতীয়।

যুক্তফ্রন্টের অন্য দুই শরিক নাগরিক ঐক্য এবং জেএসডিও ভোটের ময়দানে লিলিপুট, সন্দেহ নেই এতটুকু।   

অন্যদিকে প্রধান নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুললেও জামায়াতের শক্তি এখনও ফেলনা নয়। বিশাল কর্মিবাহিনীর পাশাপাশি তাদের পাঁচ শতাংশের বেশি ভোটের হিসাবটা বিএনপিকে কষতেই হচ্ছে। দেশের অন্তত ৬০টির মতো আসনে বিএনপিকে ভালো করতে হলে জামায়াতের ভোট লাগবে।

জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গ বারবারই এসেছে বিএনপিতে। বরাবরই তারা পাশ কাটিয়েছে বিষয়টি। ভোটের হিসাবই এর কারণ।

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি/জেবি)