বেহাল সড়কে থমকে সিলেটের পর্যটন

সিলেট ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৪

অনুন্নত অবকাঠামো ব্যবস্থা আর বেহাল সড়কের কারণে থমকে আছে সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশ। সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে পর্যটকরা এলেও সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে নানা ঝুট-ঝামেলা আর ভোগান্তির তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে যান।

অনেকেই আবার সিলেট না ঘুরে চলে যান মেঘালয়ের শিলং ঘুরতে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, হাজার কোটি টাকার উপরে উন্নয়ন-সংস্কার কাজ চলছে। আগামী বছরের জুন নাগাদ কাজ সমাপ্ত হয়ে যাবে।

প্রকৃতিকন্যা জাফলং, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, পান্থময় ঝর্ণা আর লালাখালির অপরূপ সৌন্দয্যের কারণে সিলেটে ছুটে আসেন পর্যটকরা। আকাশে হেলান দেয়া দূর পাহাড়ে মেঘের খেলা আর চা বাগানের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মোহিত হন দেশি বিদেশি পর্যটকরা।

অথচ সম্ভাবনাময় এসব পর্যটনকেন্দ্র উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, যোগাযোগ ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা এবং সড়ক সংস্কার না করায় বিকাশ হচ্ছে না এখানকার পর্যটন খাত।

পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের পৌঁছাতে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ জন্য দর্শনার্থী কমছে বলে জানিয়েছেন পর্যটক সংশ্লিষ্টরা।

প্রকৃতির লীলাভূমি হিসেবে খ্যাত জাফলং সড়কের অবস্থা করুণ। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে জৈন্তাপুর বাজার পার হলেই ভোগান্তির শুরু। জাফলং পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরা। মাঝে মধ্যেই দুই-তিন ফুট গর্ত। বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। তামাবিল পয়েন্ট পার হলেই সড়কের ভয়াবহতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

একইভাবে বিছনাকান্দি ও রাতারগুল যেতেও ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। সিলেট থেকে বিছনাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। এ দূরত্বের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার এয়ারপোর্ট বাইপাস থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। আবার সালুটিকর থেকে বিছনাকান্দি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের সড়কে স্থানে স্থানে রয়েছে অসংখ্য গর্ত।

জলারবনখ্যাত রাতারগুলের দূরত্ব সিলেট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এ সড়কের ১৫ কিলোমিটার অংশই ভাঙাচোরা।

পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলেও সরকারি উদ্যোগ খুবই কম।

সম্প্রতি বৃহত্তর সিলেটে গড়ে উঠেছে বেশকিছু আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-রিসোর্ট।

তাদের মতে, কয়েক বছরে সিলেটে হোটেল-রিসোর্ট স্থাপনেই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগের অপেক্ষায় আছে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এসএমসিসিআই) সভাপতি হাসিন আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে অনেক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর বেশ কিছু রিসোর্ট বা অবকাশকেন্দ্র। কিন্তু সমস্যা হলো যোগাযোগ। রাস্তায় নামলেই তারা দুর্ভোগে পড়ছেন।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপিত খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, অনুন্নত রাস্তাঘাট ও সুযোগ-সুবিধার অভাবেই সিলেটের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা আটকে আছে। বেসরকারি খাতে গত পাঁচ-সাত বছরে সিলেটের হোটেল খাতে হাজার কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ হয়েছে। পাইপলাইনে আছে আরও হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।

সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে কোনো পর্যটক একবার এলে দ্বিতীয়বার আসতে চান না বলে মন্তব্য করেন সিলেট হোটেল-মোটেল ও রেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাহমিন আহমদ। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, তারা সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র না ঘুরে শিলং চলে যান। এজন্য সিলেটে হঠাৎ করে কমে গেছে পর্যটকদের আনাগোনা। পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়ার সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে নাজুক থাকায় এর প্রভাব পর্যটনশিল্পে পড়তে শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বলেন, আমাদের এখন প্রায় ১৪শ কোটি টাকার উপরে কাজ চলমান আছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করব আমরা। আমরা আশা করছি রাস্তাঘাট সব ঠিক হয়ে যাবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে।

ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এমএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :