মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ভারতের সামনে সহজ টার্গেট

দেলোয়ার হোসেন, দুবাই থেকে
| আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:২৪ | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:১১

বিনা উইকেটে ১২০। লিটন- মিরাজের উড়ন্ত শুরুর পর মিডল অর্ডারে ভয়াবহ ধস নামলো। ইমরুল, মুশফিক, মিথুন, রিয়াদ- চারজনের ব্যাটে থেকে এলো ১৩! সর্বনাশ হয়ে যায় এখানেই। লিটনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি বড় ইনিংসের দারুণ সম্ভাবনা জাগালেও, মিডল অর্ডারের শোচনীয় ব্যর্থতায় ৪৮.৩ ওভারে মাত্র ২২২ রানে থামতে হলো বাংলাদেশকে। লিটন একাই করলেন ১২১ রান, ১১৭ বলে। মিরাজ ৩২, সৌম্য ৩৩ । বাকি ৭ ব্যাটসম্যান মিলে করলেন ৩০ রান ।

এমন হওয়ার কথা ছিল না। তামিম নেই, কিন্তু সেটা টেরই পাওয়া যায়নি এদিন। লিটন কুমার দাস হয়ে গেলেন তামিম ইকবাল। তামিমের মতো ভয়ডরহীন ব্যাটিং। হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়ে তুলে নেন দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে একমাত্র সেঞ্চুরিটা পূরণ করেন ৮৭ বলে।

প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নামা মিরাজরে সঙ্গে জুটিটাও দারুণ জমে ওঠে তার। দুজনের ১২০ রানের পার্টনারশিপ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির যেটা নতুন রেকর্ড।

২০১৫ সালে ঢাকাতে ভারতের বিপক্ষে তামিম-সৌম্য করেছিলেন ১০২। তিন বছর পর সেই ভারতের বিপক্ষে ১২০ রানের জুটি গড়ে নতুন রেকর্ড গড়েন লিটন ও মিরাজ। ৫৯ বলে ৩২ রান করে কেদার যাদবের বলে ফিরেন মিরাজ। তবে সৌম্যর জায়গায় মিরাজকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে যে বজিটা রেখেছিলেন, তাতে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ।

ফাইনালের একাদশে চমক থাকতে পারে, ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে একটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল মাশরাফির কথায়। কিন্তু মিরাজকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে সেই সারপ্রাইজটা দিয়ে বসবেন, কেউ ভাবেননি।দু:সাহসিক সিদ্ধান্ত।

১৬টি ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু কখনওই পাঁচের উপরে ব্যাট করেননি। ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে সেই মিরাজকে নামিয়ে দেওয়া হয় ওপেনিংয়ে!

ওপনিংয়ে সৌম্য সরকারের আস্থার চরম অভাবের কারণেই আসলে এমন উল্টা পাল্টা সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের। আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে ০তে আউট হন সৌম্য। তাকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে ফের দলের বিপদ বাড়ানোর ঝুকি না নিয়ে আরেকটা অন্য ঝুকি নেন মাশরাফি।

সেই অন্যঝুকিতে জিতলেও মাশরাফিকে হতাশ করেন মিডল অর্ডার। প্রতিপক্ষ ভারত, ম্যাচটা ফাইনাল। প্রথমবার ওপেনিংয়ে। মিরাজের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ ছিল মাশরাফির জন্যও। তবে দু:সাহসিক সিদ্ধান্তে জয়ী মাশরাফি।

এশিয়া কাপের প্রতিটা ম্যাচেই প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওপেনাররা। ফাইনালের আগে লিটন মাত্র এক ম্যাচে রান করেছেন। ফাইনালের আগে চার ম্যাচে লিটনের ব্যাট থেকে আসে যথাক্রমে ০, ৬, ৭, ৪১, ৬।

তবে লিটনের যে সামার্থ আছে, এটা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমেরিকাতে শেষ টি-টোয়েন্টি ৩২ বলে ৬১ করে দলকে জেতানো। তার আগেও ২০ ওভার ম্যাচে কয়েকটি ঝড়ো ইনিংসও ছিল তার।টেস্টে ৭০ ও ৯৪ রানের দুটি ভালো ইনিংসও এসেছে তার ব্যাট থেকে।

তবে ১৮ ওয়ানডেতে একটিও হাফ সেঞ্চুরি না থাকাটা লিটনের জন্য ছিল বিব্রতকর। ৩৪, ৩৬ এবং ৪১ পর্যন্ত গেলেও এগুলোকে হাফ সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি । ভালো খেলার মধ্যেই কেন যেন হুট করে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন বারবার। অবশেষে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিলেন লিটন এবং তা ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে এসে।

মিরাজের সঙ্গে তার পার্টনারশিপটাও বেশ জমে ওঠে। এশিয়া কাপের আগের সবকটি ম্যাচেই দুই তিন উইকেট হারিয়ে শুরতেই বারবার চাপে পড়ে গেছে বাংলাদেশ।

তবে এদিন দলকে পথ দেখান লিটন ও মিরাজ। ১২০ রানের পার্টনারশিপ। ভারতকে হারাতে হলে কম করে ২৮০ রান দরকার। লিটন ও মিরাজের ব্যাটে সেই সম্ভাবনা জানান দিয়েছিল। কিন্তু ৩২ রানে মিরাজের বিদায়ের পর শুরু ছন্দপতন। মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। কিন্তু আসল ম্যাচে ভয়াবহ ব্যর্থ হলেন তারা।

এমন উড়ন্ত শুরুর পরও ৩১ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। ইমরুল (২), মুশফিক (৫), মিথুন (২) ও মাহমুদউল্লাহ- এই চারজনের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১৩ রান! টপাটপ উইকেট পড়ে যাওয়ায় রানের গতিও থমকে যায়!

২০.৫ ওভারে ১২০/০ থেকে ৩২.২ ওভারে ১৫১/৫। ৫০ ওভার খেলাটাই তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। একজন কম ব্যাটসম্যান নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেটে শেষ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান লিটন ও সৌম্য। যা করার করতে হবে এ জুনকেই।

সে লক্ষ্য নিয়েই তারা ব্যাট করছিলেন। কিন্তু ১২১ করার পর টিভি আম্পায়ার রড টাকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফিরতে হয় লিটনকে। এরপর মাশরাফিকেও ৭ রানে ফিরতে হয় আরেক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।

ওপেনিংয়ে টানা ব্যর্থতার পর এদিন লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে আস্থার সঙ্গে রান করেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ৪৫ বলে ৩৩ করার পর রান আউট হয়ে গেলে ৪৮.৩ ওভারে বাংলাদেশ থামে ২২২ রানে।

ভারতের কুলদিপ যাদব তিনটি ও কেদার যাদব ২ উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ইনিংস: ২২২ (৪৮.৩ ওভার)

(লিটন দাস ১২১, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩২, ইমরুল কায়েস ২, মুশফিকুর রহিম ৫, মোহাম্মদ মিথুন ২, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪, সৌম্য সরকার, মাশরাফি বিন মুর্তজা ৭, নাজমুল ইসলাম অপু ৭, মোস্তাফিজুর রহমান ২, রুবেল হোসেন ০*; ভুবনেশ্বর কুমার ০/৩৩, জ্যাসপ্রীত বুমরাহ ১/৩৯, যুজবেন্দ্র চাহাল ১/৩১, কুলদীপ যাদব ৩/৪৫, রবীন্দ্র জাদেজা ০/৩১, কেদার যাদব ২/৪১)।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/ডিএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এবার স্টয়েনিস-ওয়ার্নারকে বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা প্রকাশ

প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের টেস্ট জেতা উচিত: সাকিব

শান্তর অধিনায়কত্ব নিয়ে এবার যা বললেন সাকিব

অবসর নিয়ে এবার যা জানালেন মেসি

বিশ্বকাপে হেরে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন রিচার্লিসন!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা

সিলেট টেস্টে ৮ উইকেট নেওয়া বোলারকে চট্টগ্রাম টেস্টে পাচ্ছে না শ্রীলঙ্কা

আইপিএলে হায়দরাবাদ-মুম্বাইয়ের ৫২৩ রানের ম্যাচে রেকর্ডবুকে তোলপাড়

ডি মারিয়াকে হত্যার হুমকি দেওয়া তিন দুর্বৃত্ত গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :