দৌলতদিয়ায় ৭ মিনিটের পথ পেরোতে ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:১৬

দেশের ব্যস্ততম দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কয়েক দিন ধরে নদী পারের জন্য অপেক্ষমাণ যানবাহনের দীর্ঘ সারি। শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ঘাট থেকে মাত্র ৭-৮ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে যানবাহনকে সিরিয়ালে আটক থাকতে হচ্ছে ৭-৮ ঘণ্টার বেশি।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে বড় ফেরি ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ৫ কিলোমিটার জুড়ে আটকে থাকা ৫ শতাধিক গাড়ির লাইন দেখা গেছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যাই বেশি। যাত্রীবাহী পরিবহনকে ৬-৭ ঘণ্টা করে আটকে থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় থেকে জানা গেছে, পানি দ্রুত কমতে থাকায় গত বুধবার থেকে দৌলতদিয়ার ১, ২ ও ৩ নম্বর ঘাটে ফেরি ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে। অন্যান্য ঘাটে ফরি ভেড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

এই নৌপথে ১৮টি ফেরির মধ্যে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুটি ফেরি ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে বিকল হয়ে আছে। সেগুলো ঠিক করার জন্য নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে পাঠানো হবে। এ ছাড়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অধিকাংশ ঢাকাগামী গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। এতে গত তিন দিন ধরে বাড়তি গাড়ির চাপে ঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের প্রায় গোয়ালন্দ ফিডমিল পর্যন্ত অন্তত চার কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। প্রথম দিকের ফোর লেন সড়কের বাম পাশে পণ্যবাহী ট্রাক ও ডান পাশে যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের সারি দৌলতদিয়া ক্যানেল ঘাট পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার। এরপর থেকে এক লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। এর মধ্যে অনেক ট্রাক আছে, যেগুলো দুই দিন আগে ঘাটে এসে আজও ফেরির নাগাল পায়নি বলে জানান চালকরা।

তবে নদী পার হতে আসা এসি বাসগুলো ডান পাশ দিয়ে দৌলতদিয়া বাইপাস সড়ক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে সরাসরি ফেরিঘাটে চলে যাচ্ছে। এর জন্য ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে এসি বাসগুলোর অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ করেন দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমাণ গাড়ির চালকরা।

মাগুরা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাসের যাত্রী তমিজ উদ্দিন জানান, তাদের বাসটি শুক্রবার ভোরে মাগুরা ছেড়ে এসে সকাল ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে সিরিয়ালে আটকা পড়ে। বিকাল চারটা পর্যন্ত ঘাটে পৌঁছতে পারেনি গাড়ি। ৭-৮ মিনিটের এই পথটুকু পারি দিতে ৭-৮ ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। তীব্র গরমে বাসের যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এই পরিস্থিতি উদ্ভবের জন্য কয়েকটি কারণের কথা জানান বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে এমনিতেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে রো রো (বড়) ফেরি কেরামত আলী ও ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে আছে।

এ ছাড়া ন্যাব্যতা সংকটে নদীতে ড্রেজিং করার কারণে ১ নং ফেরিঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে। ২ নং ফেরিঘাটে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি ভিড়তে পারছে না। অপর তিনটি ফেরিঘাট সচল রয়েছে।

সফিকুল ইসলাম আরও জানান, অন্যদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে ফেরি চলাচল কখনো ব্যাহত হওয়া, আবার কখনো পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ওই পথের যানবাহনগুলো নদী পার হতে দৌলতদিয়া ঘটে আসছে। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :