গুড বাই ‘অসাধারণ’ দুবাই

দেলোয়ার হোসেন, দুবাই থেকে
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:১৩

দুবাই সিটির নাকি আশ্চর্য এক জাদু আছে। গ্রীস্মে এয়াপোর্টের বাইরে পা রেখে একজন আগন্তুক হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। মনে হতে পারে- হায়, এ কোন ‘ভয়াবহ’ শহর! দুই সপ্তাহ আগে গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় এখানে পা রেখে আমারও তেমন মনে হয়েছিল। এ যেন উত্তপ্ত নগরী। এখানে মানুষজন বাস করে কীভাবে?

কি আশ্চর্য, এশিয়া কাপ শেষে যখন দেশে ফেরার সময় এসে গেছে, তখন আমি আর আগের আমিতে নেই। মনে হচ্ছে, মরু নগরীর প্রেম পড়ে গেছি। ‘অসাধারণ’ দুবাই ছাড়ার বেদনা আমার বুকের গভীরে।

বছরে আট মাস ভয়াবহ গরম এখানে। চার মাস শীত। এখন গরমের শেষ ভাগ। দুবাইয়ের ফেস্টিভাল সিটির ‘গর্জিয়াস’ ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে এশিয়া কাপের ঘাটি গেড়েছিলেন মাশরাফিরা। সেখানকার বাংলাদেশি এক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ জানালেন, আগামী তিন মাসের জন্য তাদের সব রুম বুকড গয়ে গেছে। পর্যটন মৌসুমে তাদের নাকি দম ফেলার সময় থাকে না। সারা বিশ্ব থেকে ধনকুবরা দুবাই সমূদ্র সৈকতের মিস্টি রোদে স্নান করে নিজেদের সতেজ করে তুলেন।

এখানে আসার পর আরবদের প্রতি সম্মান ও মমতা দুটোই বেড়ে গেছে। ৫০, ৮০, ১০০ অথবা ৫০০, ১০০০ বছর আগে কতটা কঠিন জীবন সংগ্রাম ছিল তাদের, এটা ভেবে আমি ব্যথিত।প্রায় পুরো দেশটা মরূভূমি। যেখানে পানি নেই, খাবার নেই, গাছ নেই। সঙ্গে গ্রীস্মের ৫০ ডিগ্রী ছোঁয়া ভয়বাহ গরম। তালপাতা ও খেজুর পাতার ছাউনির ঘরে খাবার বলতে খেজুর।

সেইসব কঠিন দিনলিপি পেরিয়ে আরবদের এখন দারুণ সুসময়। আরামের জীবন। গৌরবের জীবন। বাসায় এসি, গাড়িতে এসি এবং যাত্রী ছাউনিতেও এসি। দুবাই যেন এসি’র নগরী। এসি ছাড়া যেখানে একটা মিনিট অচল।

দুবাই। কীভাবে, কত ত্যাগের বিনিময়ে, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মরুভূমির বুকে তিলে তিলে আশ্চর্য এক নগরী গড়ে তোলা হয়েছে, সে কথা ভেবে শিহরণ জাগে। কত সব মেগা পরকল্পনা এবং তার সফল বাস্তবায়ন!সাগর ভরাট করে গড়া হয়েছে নতুন নগরী। আবার স্থলভাগ খনন করে সাগরকে নদী বানিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে শহরের অভ্যন্তরে। সেই কৃত্রিম নদীর উপর চোখ জোড়ানো সব সেতু। দুপাশে কত শত মনোমুগ্ধকর স্থাপনা!

প্রতিটা উন্নত শহরের মধ্যে কমন কিছু মিল থাকে। এই মিলের মধ্যে আবার স্ব স্ব নগরীর আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্যও থাকে। দুবাই যেন অনন্য এক বৈশিষ্ট নিয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে আধুনিকতা, ইউপিয়ান-আমেরিকান স্টাইল, অন্যদিকে আরব্য ঐতিহ্য।

দুবাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ইউরোপ আমেরিকা মানের।মেট্রো স্টেশনগুলো এতটাই গর্জিয়াস, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি যে, ইউরোপের কোনো কোনো দেশ হয়তো এক্ষেত্রে পিছিয়েই থাকবে। সুপ্রসস্ত, ঝকঝকে রাস্তা, শহর জুড়ে অসংখ্যা বাহারি ওভারব্রিজ, ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম, দামি দামি গাড়ি-ঠিক যেন ইউরোপিয়ান লুক।

এখানকার আইন কানুন খুবই কড়া। এবং সবার জন্য তা সমান। দুবাই এতটাই নিরাপদ নগরী যে, মিলিয়ন ডলার পড়ে থাকলেও কেউ ছুঁয়ে দেখার সাহস করবে না। পুরো নগরী সিসি ক্যামেরার আওতায়। হত্যা, চুরি, ডাকাতি- এ শব্দগুলো দুবাই শহরের সঙ্গে যেন বেমানান। সবাই আইনের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধাশীল।

প্রায় দুই সপ্তাহ দুবাইয়ের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মেট্রো, বাস এবং ট্যাক্সিতে যাওয়া আসা করার সময় আরবদের তেমন একটা চোখে পড়েনি। দুবাইয়ে এমনিতে আরবরা সংখ্যালঘু, সব অঞ্চলে তারা থাকেনও না। গাড়িতেই তারা চলাচল করেন। মেট্রো অথবা বাসের ৯৯ ভাগ যাত্রী এখানে বিদেশী।

টিম হোটেলে, প্রেসবক্সে কয়েকজন অ্যারাবিয়ানের সঙ্গে বলে মনে হয়েছে- এরা খুবই বিনয়ী, নম্র, সহনশীল এবং মার্জিত স্বভাবের।কথা বলেন নিচু স্বরে। এই শুভ্র চেহারার ‘জেন্টল’ আরবদের কথা মনে থাকবে। মনে থাকবে অসাধারণ দুবাইকে।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/ডিএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে মুস্তাফিজের খেলা নিয়ে যা জানাল বিসিবি

যে কারণে বাংলাদেশের প্রাথমিক দলে নেই সাকিব-মুস্তাফিজ

আইসিসির আন্তর্জাতিক প্যানেলে যুক্ত হলেন বাংলাদেশি আম্পায়ার মোর্শেদ

বড় চমক রেখে জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা

টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে হারমানপ্রীত-স্মৃতি মানদানারা

তীব্র গরমে ফ্লাডলাইটে ফুটবল ম্যাচের সিদ্ধান্ত

জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন সুনীল নারিন

 হাথুরুর সঙ্গে নির্বাচকদের বৈঠক সম্পন্ন, আলোচনা হলো যা নিয়ে

মুস্তাফিজের আইপিএল ছাড়া নিয়ে যা বললেন চেন্নাই কোচ

ঢাকায় পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :