পুঁজিবাজারে ১৫ কোম্পানির জবাবে অসন্তোষ, পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:০৩

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস

গত পাঁচ বছর ধরে লভ্যাংশ দিচ্ছে না-এমন ১৫ কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই। এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি অনুমতিও দিয়েছে।

শিগগির এই পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হবে, এর পরেই এসব কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসব লোকসানি কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ না দিলেও এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠে। এই অবস্থায় গত ৭ আগস্ট এসব কোম্পানির কাছে তাদের উৎপাদনসহ আর্থিক অবস্থা নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় ডিএসই।

কোম্পানিগুলো হলো: মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ডুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, সামতা লেদার কমপ্লেক্স, শ্যামপুর সুগার মিলস, জিলবাংলা সুগার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ, কেরু মেট ইন্ডাস্ট্রিজ, সাভার রিফ্র্যাকটরিস, বেক্সিমকো সিনথেটিকস, জুট স্পিনার্স, শাইনপুকুর সিরামিক, বেক্সিকমো সিনথেটিকস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল এবং ইনফরমেসন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ।

রকিবুর রহমান বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর কোম্পানিগুলো লিখিত যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা ডিএসইর কাছে সন্তোাষজনক মনে হয়নি। ফলে এগুলোর প্রতিনিধিদের সরাসরি ডিএসই কার্যালয়ে শুনানিতে ডাকা হয়। এতে পাঁচ থেকে ছয় কোম্পানি জানিয়েছে, নানা কারণে তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না এবং শিগগির মুনাফায় আসা সম্ভব নয়। আগামী আরও কয়েক বছর তাদের পক্ষে লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে বলেও জানায় তারা।’
‘এই কোম্পানিগুলোর সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিনে খুব শিগগির পরিদর্শন করা হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটি এ জন্য অনুমতিও দিয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

যে কোম্পানিগুলোর নাম ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো এখনও বাজারে লেনদেন হচ্ছে এবং এই সময়ে অনেকগুলোর দামও অস্বাভাবিক পর্যায়ে বেড়েছে।

কোম্পানিগুলো পর্যালোচনা করে দেখো গেছে, ১৫ টি কোম্পানির মোট ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানিগুলোর স্পন্সর/পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৫৪ কোটি ১৭ রাখ ৭৬ হাজার ৮৯৩টি, সরকারের হাতে রয়েছে ৬৮ লাখ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৮টি, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ হাজার ৩৪২টি এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩১ কোটি শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারের সর্বমোট মূল্য অন্তত ৩৪৪ কোটি টাকা।
এছাড়া কোম্পানির মধ্যে শ্যামপুর সুগার মিলস তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি’১৮-মার্চ’১৮) শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ১৪ টাকা ৯৯ পয়সা। আর নয় মাসে (জুলাই’১৭-মার্চ’১৮) লোকসান ৫৫ টাকা ৮৪ পয়সা। রিজার্ভ লোকসান রয়েছে ৩৩৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

জিলবাংলা সুগার তৃতীয় প্রান্তিকের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৬ টাকা ৫৩ পয়সা। গেল বছরের যা একই সময়ে লোকসান ছিল ২ টাকা ৯৬ পয়সা। রিজার্ভ লোকসান রয়েছে ২৫৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

ইমাম বাটনের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান ৩৩ পয়সা। গেল বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ১৫ পয়সা। রিজার্ভ লোকসান রয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বেক্সিমকো সিনথেটিকসের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান ১ টাকা ৩৬ পয়সা। এর আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৪০ পয়সা। কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ৯২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ১৯৯৩ সালে।

শাইনপুকুর সিরামিকস তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস ১০ পয়সা। আগের বছর একই সময় কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১১ পয়সা। রিজার্ভ রয়েছে ২৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সোনারগাঁও টেক্সটাইল তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’১৮) শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২৭ পয়সা। কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৫ সালে।

মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ তৃতীয় প্রান্তিকের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১০ পয়সা। এছাড়া রিজার্ভ লোকসান রয়েছে ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’১৮) শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৬৩ পয়সা। রিজার্ভ লোকসান রয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’১৮) শেয়ার প্রতি লোকসান ৫ পয়সা। রিজার্ভ রয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রান্তিকের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৮ পয়সা। রিজার্ভ লোকসান রয়েছে ১ হাজার ৭০৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক এর তৃতীয় প্রান্তিকের লোকসান হয়েছে। তবে কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এছাড়া দুলামিয়া কটন, জুট স্পিনার্স, কে অ্যান্ড কিউ, সাভার রিফ্যাক্টোরিজ কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসানসহ রিজার্ভেও লোকসান রয়েছে।
এ বিষয়ে বাজার বিশেষজ্ঞক দেবব্রত কুমার সরকার জানান, ‘ডিএসই যে ১৫টি কোম্পানি নিয়ে পর্যালোচনা করছে সেটি খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে তাদের কোনো সিদ্ধান্তে যেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে ১৫টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির রিজার্ভ আছে। মূলত কোম্পানিগুলো চাইলে রিজার্ভ থেকেও লভ্যাংশ দিতে পারে। কিন্তু রিজার্ভ থাকার পরও কোম্পানিগুলো কেন গেল পাঁচ বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি সেটিও যাচাই করা উচিত।’

ডিএসইর সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মানুষ বিনিয়োগ করতে আসে মুনাফার জন্য। বিনিয়োগ ঝুঁকি এখানে আছে সেটি সত্য। কিন্তু তাই বলে বিনিয়োগ শূন্য হয়ে ফিরে যাবে এমন ধারণা থাকা উচিত নয়। পুঁজিবাজারে মূলত খারাপ কোম্পানির শেয়ারগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এসব কোম্পানির মধ্যে যেগুলো বাজারকে ক্ষতি করছে ডিএসই মূলত সেসব কোম্পানিগুলোকে নিয়ে কাজ করছে। তবে ডিলিস্টেট বা পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচুত্য করা হবে কি না সেটি আমি অবগত নই।’

‘খারাপ কোম্পানিকে বাজার থেকে বের করে দিতে হবে এটিই সত্য। তবে এর মাধ্যমে যেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে নজর দিতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/০১অক্টোবর/আরজেড/ডব্লিউবি