দেশে ৪২ শতাংশ মানুষের ইন্টারনেট বান্ধব ফোন আছে

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪১ | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪৫

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট বান্ধব মোবাইল ফোন আছে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ। বেসরকারি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), মোবাইল ফোন সেবাদাতা গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের শীর্ষ প্রতিনিধি এবং সংবাদকর্মীদের সামনে গবেষণা  প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন লার্ন এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিলানী গালপায়া।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর জরিপটি করা হয় ২০১৭ সালের শেষের দিকে। বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকার ১৮টি দেশে একই গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় জানিয়ে লার্ন এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তাদের জরিপের তথ্যগুলো গ্লোবাল সাউথে (উন্নয়নশীল রাষ্ট্র) মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সবচেয়ে নির্ভুল তথ্যের ডেটাবেজ।

তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং ব্যবহারকারী সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের গ্রহণযোগ্য পন্থা হচ্ছে এর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। এই গবেষণায় আমরা সেই কাজটিই করেছি।’

বাংলাদেশে চালানো জরিপের ফলাফল সম্পর্কে লার্ন এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিক ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশের একটি করে ইন্টারনেট বান্ধব ডিভাইস রয়েছে।’

তবে সরকারি সংস্থা বিটিআরসির তথ্যমতে, ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা নয় কোটি পাঁচ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬.৫৭ শতাংশ।

দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গরমিলের কারণ জানতে চাইলে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিগত ৯০ দিনে একজন ব্যবহারকারী একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে আমরা তাকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে ধরি। তাই বিটিআরসির হিসাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশি।’

অন্যদিকে লার্ন এশিয়ার প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা হিলানি গালপায়া বলেন, ‘আমরা আগেও দেখেছি আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন সব সময়ই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং টেলিকম অপারেটরগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও আমরা বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকার ১৮টি দেশে একই গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। ফলে প্রাপ্ত তথ্যগুলো নিঃসন্দেহে গ্লোবাল সাউথে(উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো) মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সবচেয়ে নির্ভুল ও তথ্যের ডাটাবেজ।’

এই গবেষণায় দেশের ৪০টি জেলার ১০০টি ওয়ার্ড ও গ্রামে দুই হাজার পরিবার ও ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা চালানো হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়, গবেষণা পদ্ধতিটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা উদ্দিষ্ট (১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী) জনসংখ্যার ৯৫ ভাগ প্রতিনিধিত্বমূলক এবং এতে সম্ভাব্য ত্রুটির মাত্র ৩.৩ শতাংশের কম-বেশি।

লার্ন এশিয়ার গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তারা এখন পর‌্যন্ত যতটি দেশে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি।

এই একই বিষয়ে পৃথিবীর যতগুলো দেশে লার্ন এশিয়া সমীক্ষা চালিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারী-পুরুষের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী পুরুষদের তুলনায় একই বয়সী ৩৪ শতাংশ কম নারীর নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে। ৬২ শতাংশ কম নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে বাস করা ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষ শহরের একই বয়সের মানুষের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, এই গবেষণা প্রতিবেদনটি টেলিকম খাতের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের যে বৈষম্য রয়েছে সেটিও ফুটে উঠেছে।

তিনি জানান, তাদের গবেষণা মারফত জানা গেছে, ১৫ থেকে ৬৫ বয়সের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক-চতুর্থাংশেরও কম অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন। তিনি এজন্য ব্যবহারকারীদের এই সম্পর্কে অজ্ঞতাকেই দায়ী করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলি, রবির প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান।

লার্ন এশিয়া একটি এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় আইসিটি পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। সংস্থাটি ২০০৫ সাল থেকে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় পক্ষের গবেষণা পরিচালনা করার পাশাপাশি টেলিকম খাতের নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কাজ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের সমীক্ষা পরিচালনা করে আসছে লার্ন এশিয়া।

(ঢাকাটাইমস/২অক্টোবর/এজেড/মোআ)