গতি হারিয়েছে ‘জাতীয় ঐক্যের’ আলোচনা

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২০ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৪০

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস

বিএনপি, কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়া এবং এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের মধ্যে সমঝোতা প্রক্রিয়া আটকে গেছে। ১ অক্টোবর তাদের একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা থাকলেও তার কোনো প্রতিফলন নেই।

এর মধ্যে ১ অক্টোবর আগের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। সেখানে আমন্ত্রণের প্রত্যাশায় ছিলেন ঐক্যের আলোচনায় থাকা নেতারা। কিন্তু বিএনপি একাই সমাবেশ করেছে। আবার সে সমাবেশে ঐক্যের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সুস্পষ্ট ঘোষণার প্রত্যাশাও পূরণ হয়নি অন্যদের।

অথচ গত ২২ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপির পাশাপাশি অন্য নেতারাও ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১ অক্টোবর থেকে সবাই এক হয়েই কাজ করবেন।

সেদিনকার সমাবেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ নানা দাবিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। আর সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরদিন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে যে সংবাদ সম্মেলন করা হয়, তাতে বিএনপি বা যুক্তফ্রন্টের কোনেো নেতা ছিলেন না। এই অনুপস্থিতি সেদিনই প্রশ্নের জন্ম দেয়, যেটার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ৭ অক্টোবর রাজধানীতে যে মানববন্ধনের ডাক দেয়া হয়েছে সেখানে বিএনপি বা যুক্তফ্রন্টের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারেননি ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা।

আবার ৩০ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে বিএনপি আগামী ৩ অক্টোবর সব জেলা শহর এবং পরদিন সব বিভাগীয় শহরে যে সমাবেশের ডাক দিয়েছে, সেখানেও ঐক্য প্রক্রিয়া বা যুক্তফ্রন্টের উপস্থিতির বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। সেই সমাবেশ থেকে ঐক্যের বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের কথাও স্পষ্ট করা হয়নি।

ঐক্য গঠনে মধ্যস্ততা করা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে একটু সময় লাগছে। কে কথা বলবে- এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে। তার ওপর সরকার যেভাবে লেগে আছে, তাই আমাদের একটু সাবধানতার সাথে এগোতে হচ্ছে।’

একই প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন নিজেদের ঘোষণা অস্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘১ অক্টোবর থেকে সকলেই একসাথে যুগপদ আন্দোলনের কোন কথাই হয় নাই। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া জনগণের ঐক্যদ্ধ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই জনগণের ঐক্য, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ঐক্য। আমাদের এটা কোন জোটের সাথে জোট নয়, দলের সাথে দলের ঐক্য নয়।’

মোস্তফা আমিন আরও দাবি করেন, তাদের সমাবেশে বিএনপি দল হিসেবে আসেনি, কয়েকজন নেতা ব্যক্তি হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্যের আলোচনায় যুক্তফ্রন্টের মাহমুদুর রহমান মান্না খুব উৎসাহী হলেও চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার শর্ত দিয়ে বিষয়টি ঘোলাটে করে দিয়েছেন। আবার এই ঐক্য হলে নেতৃত্ব কামাল হোসেনের থাকবে নাকি বদরুদ্দোজা চৌধুরী অথবা বিএনপির থাকবে-এ নিয়েও মন কষাকষির খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

ঐক্যের আলোচনা করতে গিয়ে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অন্যদেরকে না জানিয়ে ভাইভারে লন্ডনে অবস্থানকারী নেতা তারেক রহমানকে যুক্ত করেছেন বলেও খবর এসেছে। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে অবিশ্বাসের খবরও ভেসে বেড়াচ্ছে।

তাহলে কি ঐক্যের আলোচনা থমকে গেছে?- জানতে চাইলে মোস্তফা আমিন বলেন, ‘বিএনপির আলাদা কর্মসূচি আছে, আমাদেরও আলাদা কর্মসূচি আছে। আগামী ৭ তারিখ দলনিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে প্রেসক্লাবে মানববন্ধন আছে। যার যার অবস্থান থেকে আলাদা কর্মসূচি পালন করা হবে ‘

‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক (ড. কামাল হোসেন) স্বাস্থ্যগত কারণে এখন দেশের বাইরে আছেন। এ জন্য আলোচনা আগাচ্ছে না। তিনি দেশে ফিরলে এই বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে।

ঐক্যের আলোচনায় থাকা যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবেই এগোচ্ছি। আমরা আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছি। এখন বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা একসঙ্গে বসে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব। সেক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন এখন দেশের বাইরে থাকায় একটু বিলম্ব হচ্ছে।’

‘আশা করছি ৭ অক্টোবরের মধ্যে তিনি (ড. কামাল) দেশে ফিরবেন। এরপর আলোচনা এগিয়ে যাবে।’

বিএনপি তো যুক্তফ্রন্টের শর্ত অনুযায়ী জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দেয়নি, তাহলে ঐক্য কীভাবে হবে- এমন প্রশ্নে মান্না বলেন, ‘জামায়াত ছাড়তে হবে, এমন কোন দাবি ছিল না আমাদের যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে। আমাদের বক্তব্য, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাথে আমাদের কোন ঐক্য হবে না। জামায়াত অবশ্যই স্বাধীনতা বিরোধী, তাদের সাথে আমাদের কোন ঐক্য হতে পারে না। তবে বিএনপির সাথে জামায়াত থাকবে কি থাকবেন, সেটা আমাদের বিষয় না। সেটা ঐক্যে প্রভাব ফেলবে না।’  

বিএনপি সঙ্গে জামায়াত থাকলে তাহলে তো তারাও ঐক্যের অংশই হলো- এমন প্রশ্নে মান্না নতুন এক ব্যাখ্যা দেন। বলেন, ‘দেখুন টেবিলে হাত আছে, হাত মাথার সাথে সংযোগ আছে। সুতরাং মাথা টেবিলে আছে। এই রকম যুক্তি রাজনীতিতে চলে না।’

ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/জিএম/ডব্লিউবি