নৌমন্ত্রীর ‘জয়বাংলা উৎসবে’ নেই আ.লীগের নেতারা

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ২০:১৭

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ‘জয়বাংলা’ উৎসব অনুষ্ঠানের অভিযোগ উঠেছে। শাজাহান খান ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর অনুষ্ঠানের মধ্যমণি থাকলেও মঞ্চের প্রথম সারিতে বিশেষ অতিথির আসনে ছিলেন বিএনপির সাবেক শীর্ষ দুই নেতা। এরই মধ্যে বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ আকারে গেছে বলে জানা গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে নৌমন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় ‘জয়বাংলা’ উৎসব।

অনুষ্ঠানে নিজেদের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে দাওয়াত না পাওয়ার অভিযোগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। আর জেলা সভাপতি জানান, দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তারা অনুষ্ঠানে যাননি।

সকালে উৎসবের প্রথম অধিবেশনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতা হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নৌমন্ত্রী। আর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার, সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ নুুরুল হক মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র চৌধুরী নুরুল আলম বাবু চৌধুরী, বিএনপি সমর্থিত পৌর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান ও অগ্নিবীণার চেয়ারম্যান এইচ এম সিরাজ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জয়বাংলা উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, নৌমন্ত্রীর ছোট ভাই ও মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান খান। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক নেতা ছাড়া তেমন আর কাউকে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। মঞ্চে সাবেক জাসদ নেতা আর ১৪ দলের কিছু নেতাকে আসনের প্রথম সারিতে বসতে দেখা যায়। র‌্যাব, পুলিশ আর আনসার-ভিজিপি সদস্যদের কঠোর অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসব আয়োজকরা জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে জয়বাংলা উৎসবের আয়োজন। নতুন প্রজন্মের মনে স্বাধীনতার মূল্যবোধ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও জাতি গড়ে তোলার কাজকে এই উৎসব আরও বেগবান করবে।

কিন্তু উৎসবে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত না দেয়ার অভিযোগ করেন জেলা নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা বলেন, ‘আমাদের জেলা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জয়বাংলা উৎসব করা হলো। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম সংগঠন আওয়ামী লীগকে ছাড়া নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাজাহান খান কীভাবে এসব করেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমরা দলের হাইকমান্ডকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি, আশা রাখি বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। আমরা দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারিনি।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যারা জয়বাংলার অনুষ্ঠান করে, তারা কখনোই জয়বাংলার লোক নয়। এই অনুষ্ঠানে কিছু বিএনপির নেতাকে দাওয়াত করা হয়েছে, যারা এখনো বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস করে না। এখানে আমাদের দাওয়াত না দেয়ায় ভালো হয়েছে।’

জয়বাংলা উৎসবের পৃষ্ঠপোষক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জয়বাংলাকে ছড়িয়ে দিতেই এই আয়োজন করেছি। জয়বাংলা কারও একার নয়, এই স্লোগান সমস্ত বাঙালির। আমাদের প্রিয় নবীজি যেমন তার দেশরক্ষার জন্য স্লেøাগান দিয়েছিল, আর সাহাবিরাও দিয়েছে। ঠিক তেমনি এই জয়বাংলা স্লেøাগান বাঙালির নিজস্ব স্লেøাগান।’ মন্ত্রী এ সময় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে ভুল-ত্রুটির বিষয় সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

উৎসবের উদ্বোধক ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তার বক্তব্যে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ আর আওয়ামী লীগকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। তবে বারবার আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য পরাজিত শক্তি পেছনে আঠার মতো লেগে থেকেছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাদের পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি বিজয়ী হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/৩অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :