ঢাবি’র সনজিতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৩৩

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত ছাত্রলীগের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সনজিত চন্দ্র দাস। নতুন কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ইতিবাচক কাজ করে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সারাদেশে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন নিয়মিত।

কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম রুহুল আমিনকে ঢাকা মেডিকেলে মারধরের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সনজিতকে নিয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে জানানো হলে অতি দ্রুত ছাত্রলীগের মধ্যে সনজিতকে নিয়ে অপপ্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এর আগেও ছাত্রলীগে নিজেদের মধ্যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এত কথা বলার কিছু নেই। আমি সনজিতকে ডেকে বলে দিয়েছি, এরপর যেন এমনটা আর না হয়। যদিও ঘটনার সঙ্গে সনজিতের সরাসরি সম্পৃক্তা ছিল না বলে প্রমাণ পেয়েছি। তারপরও যারা সনজিতের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারা ছাত্রলীগের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। তাদেরকে এসব বন্ধ করতেই হবে। তা না হলে যারা এসব নোংরামি করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

এদিকে, বিএনপিপন্থী এক নেতার মালিকানাধীন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে এ ঘটনায় সনজিতকে দায়ী করে একটি সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। যেখানে একতরফাভাবে সনজিতকে দোষী বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি যে সনজিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার কোনো বক্তব্যই নেয়া হয়নি। ফলে টেলিভিশনের এই রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, একটি মহল অনৈতিক সুবিধা দিয়ে এই নিউজ বিএনপিপন্থী টেলিভিশনটিতে প্রচার করেছে।

প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক চার নেতাকে নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে সংগঠনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে খোদ কমিটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। এ নিয়ে সংগঠনটির ভেতরে-বাইরে চলছে আলোচনা-সমালাচনা।

জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের লিফটে ওঠা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (সোহাগ-জাকির কমিটি) রুহুল আমিনকে মারধর করে ঢাবির হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন রুহুল আমিন। এ ঘটনা তদন্তে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি আরেফিন সিদ্দিকী সুজন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিল ভূঁইয়া তানবীর ও শওকতুজ্জামান সৈকত এবং ঢাবির জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু সালমান প্রধান শাওন। তবে এর মধ্যে আরেফিন সিদ্দিকী সুজন, তানজিল ভূঁইয়া তানবীর ও আবু সালমান প্রধান শাওনের তদন্ত কমিটিতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সিদ্দিক সুজনের কক্ষে (৩১৫ নম্বর) অভিযান চালিয়ে একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি রামদা, একটি খেলনা পিস্তল, ককটেল তৈরির সামগ্রী এবং ইয়াবা তৈরির প্যাকেট উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় হল থেকে বিভিন্ন মামলার আসামিসহ সাত বহিরাগতকেও আটক করে পুলিশ। যারা সুজনের ছত্রছায়ায় হলে থাকত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাহবাগ থানা পুলিশের যৌথ অভিযানের পর সুজন হল ছেড়ে দেয়। ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিল ভূঁইয়া তানভীর ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পলাশী মোড়ে অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। এছাড়া ছাত্রলীগের একজন হল সভাপতি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতির কর্মকাণ্ড তদন্ত করতে পারেন না। সে হিসেবে সুজন ও তানজীলের পাশাপাশি শাওনের তদন্ত কমিটিতে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ছাত্রলীগের একজন হল সভাপতি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পেতে পারেন না। এছাড়া বাকি দুজনের একজন অস্ত্রসহ সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন এবং অন্যজনের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব জেনেও কেন তাদেরকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের কেউ অপরাধ করে পার পেতে পারে না, সে যেই হোক। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির দোষ তদন্তে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়ে, তারাও তো শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজে জড়িত ছিলেন। এটাও ভেবে দেখা উচিত ছিল।

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমি আগেও বলেছি এবং দৃঢ়তার সঙ্গে এখনো বলছি, ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। রুহুল আমিন ভাই ছাত্রলীগে আমার অগ্রজ। উনাকে সম্মান করি। উনার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমরা একই পরিবারের সদস্য। সেদিন রাতে ঢাকা মেডিকেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমার বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা ছাত্রলীগেরই ইমেজ নষ্ট করছেন। তাদের কাছে অনুরোধ করবো, বিষয়টা পুরোপুরি জেনে বুঝে লিখুন এবং বলুন। তা না হলে বিরোধীপক্ষ ছাত্রলীগ নিয়ে সমালোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে। এটা কখনোই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে কাম্য হতে পারে না।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মুঠোফোনেও এ বিষয়ে জানতে বুধবার সন্ধ্যায় ৭টার পর কল দেয়া হয়। তবে তারা কল রিসিভ না করায় এ বিষয়ে মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :