‘সিনহার বিরুদ্ধে মামলা ছাড়া উপায় ছিল না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৫৯ | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৩৮

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে যে মামলা করেছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এটা ছাড়া তার কোনো উপায় ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের পর বিচার দাবি করেছেন সাবেক এই মন্ত্রী।

বুধবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসিতে একটি টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। টক শোতে আলোচক হিসেবে আরও যোগ দেন সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলা উচ্চ আদালতে ডিসমিস করতে এসকে সিনহা দুই কোটি টাকা এবং এক কোটি ২৫ লাখ টাকার অন্য একটি ব্যাংক গ্যারান্টি ঘুষ চান বলে মামলায় উল্লেখ করেন নাজমুল হুদা।

'দুদকের একটি মামলার প্রয়োজন ছিল আর সেটার ব্যবস্থা আপনি করে দিলেন কি না'-এমন প্রশ্ন রাখেন উপস্থাপক। জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, ‘সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা দুঃখজনক। আসলে আমি একজন সাধারণ নাগরিক। এখানে আমি ক্ষতিগ্রস্ত। আমার যে আইনগত অধিকার রয়েছে সে অধিকার সমুন্নত রাখতে এবং সংরক্ষিত করতে আইনের আশ্রয় আমরা নিতেই পারি। আর সে আশ্রয়টাই আমি নিয়েছি। সত্য বলতে কি, এটা না করে আমার উপায় ছিল না।’

এ মামলার বিচার দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সাবেক এই মন্ত্রী। বলেন, ‘ওই আসনে বসে যারা জুডিশিয়াল ইন্টেগ্রিটির কথা চিন্তা করবে, তাদের ভাবমূর্তি ধরে রাখার জন্য কাজ করবে, তারা যদি নিজেরাই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে বিভিন্নভাবে জুডিশিয়ালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন, তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দেয়া যায় না।’

নির্বাচনের আগে এ ধরনের মামলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চান উপস্থাপক। গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে ‌‌উপস্থাপক বলেন, তখন আপনি কাউকে জানালেন না কিংবা অভিযোগ করলেন না কেনে। এখন এই মামলায় আপনার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির এমপি সালমা ইসলামকেও জড়িয়েছেন। এটা এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো কি না। একই সাথে তিনিও আপনার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছেন।

জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, ‘মানহানির মামলা করলে করবে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে, মানহানিতো তখনই হবে যদি আমারটা অসত্য হয়।’

একমাত্র এসকে সিনহার ক্ষেত্রেই কি এমনটা হয়েছে নাকি বিচার বিভাগে এভাবে টাকা চাওয়া-চাওয়ি চলছে, অভিজ্ঞতার আলোকে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘এখানে অনেক সময়ই ডিজ অনেস্ট্রির অনেক কাহিনি শুনতে পাই। কেউইতো আর ধোয়া তুলসি পাতা নয়। সেটা হয়তো ওপেনলি আমার পক্ষে বলাটা ঠিক না।’

‘আর সিনহার বিষয়টা তো আমার নিজের সাথে ঘটেছে। অন্য কারো কাছ থেকে আমি এমনটা পাইনি, ডিরেক্টলি ওনার কাছ থেকেই এমনটা হয়েছে।’

দুর্নীতিটা কতদূর প্রসারিত হয়েছে আর বিচারপতিদের দুর্নীতির খবর সাধারণ মানুষদের কী বার্তা দেয়? এমন প্রশ্ন করা হয় সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে বলা হয়েছিল মানুষের শেষ ভরসার স্থল। ব্রিটিশ আমলে বিচার বিভাগের সৃষ্টির সময় থেকে বাংলাদেশের শুরু পর্যন্তও কিন্তু এর প্রতি মানুষের সম্পূর্ণ আস্থা ছিল। কিন্তু নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সেই আস্থায় চিড় ধরেছে।’

সাবেক এই বিচারক বলেন, ‘প্রতিটা সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের মতাদর্শের বিচারক নিয়োগ দেয়। বিচার বিভাগের নিম্নতম পদ হচ্ছে সহকারী জজ। এই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় যারা ৪৫ শতাংশ নম্বর পাবেন না তাদের অযোগ্য করা হয়। আমি যখন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার্ড ছিলাম তখনও এমন অনেকে বাদ পড়েছেন নম্বর তুলতে না পারার কারণে।’

‘অথচউচ্চ আদালতে শিক্ষাগত যোগ্যতা না দেখেই তাকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন। আজকে সিনহা সাহেবের বিরুদ্ধেও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। পত্রিকায় পড়লাম যে ওনার ইন্টারমিডিয়েট ও বিএতে থার্ড ডিভিশন। এ ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে পৃথিবীর কোথাও প্রধান বিচারপতি পদে নিযোগ দেয়া হয় না। আপনারা যারা ওনাকে (সিনহা) নিয়োগ দিয়েছেন সেটা হয়ত দেখবেন না।’

ইকতেদার আহমেদের বক্তব্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতির নীতিমালা না থাকায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের বিষয়টি কারণ কি না জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের আলোচক আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেয়া হয় এমন কথা নয়। কারণ ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমন ব্যক্তিরাও নিয়োগ পেয়েছেন যারা আওয়ামী লীগ তো করেনই না, আওয়ামী লীগের নামও উচ্চারণ করেন না। বঙ্গবন্ধুর নামও বিকৃতভাবে উচ্চারণ করেন।’

এসকে সিনহার লেখা বইয়ে বলা হয়েছে, পছন্দের মামলায় পছন্দের বিচারক নিয়োগ করা হয়। এ ব্যাপারে রেজাউল করিম বলেন, ‘একেবারে যে হয় না এমনটা কিন্তু বলা ঠিক হবে না। তবে ইন জেনারেলি যদি বলি যে, রাজনৈতিক নিযোগ দেয়া হয় তাও ঠিক না। অনেক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিচারকও কিন্তু নিয়োগ পান। বিএনপির আমলেও কিন্তু ভালো বিচারক নিয়োগ পেয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন না এমন ব্যক্তিও আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগ পেয়েছেন।’

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/এএকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :