শুক্রবার শিথিল থাকবে শাহবাগের অবরোধ

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৩৯ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীর শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে তা শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার জন্য শিথিল থাকবে। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভোর ছয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত অবরোধ শিথিল রাখার কথা জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতা মেহেদী হাসান ঢাকাটাইমস বলেন, শুক্রবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আসবেন এই এলাকায়। অবরোধ রাখলে তাদের কষ্ট হবে। এটা অমানবিক ব্যাপার হবে। এজন্য আমরা অবরোধ শিথিল করে ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রাস্তায় ভলান্টিয়ারি করবো। এরপর যথারীতি অবরোধ শুরু হবে।

কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। বৃহস্পতিবার কর্মদিবসে নগরীর ব্যস্ততম মোড় দখল করে রাখায় যাতায়াতের ভোগান্তি চরমে উঠে। তবে পুলিশ অবরোধকারীদের প্রতি নমনীয়। তারা চারপাশে অবস্থান নিলেও কিছুই করছে না।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মুখে গত ১১ এপ্রিল সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাড়ে পাঁচ মাস পর ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে।

এই সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত সবধরনের সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য। স্বাধীনতার পর পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই সুবিধা চালু করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই সুবিধার আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদেরকেও আনে।

সে সময়ই জামায়াতপন্থীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে আরও একাধিকবার সে চেষ্টা করে তারা। তবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে। আর এর প্রতিক্রিয়ায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা ক্ষুব্ধ করেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডকে। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন দিয়ে আইন বা বিধি পরিবর্তন করা যায় না। এর জন্য অধ্যাদেশ জারি করতে হয়। আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত আমরা আইনগতভাবে এগোতে পারছিলাম না। আমরা বিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা একটা সরল বিষয়। আমরা রিট পিটিশন দায়ের করব। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা সবাই রিট পিটিশনার হবেন।’

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় তারা। গভীর রাতেও তাদের অবস্থান অটল ছিল। পরদিন সকাল থেকেই মোড়ে চারপাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ। ভেতরে অবস্থান চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেয় তারা।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অবরোধকারীরা ৩০ শতাংশ লিখে পাশে কোটা বহালের দাবিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। স্লোগানের মধ্যে ছিল, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়িনি’, ‘জয় বাংলার হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বিপ্লবীদের হাতিয়ার, মুক্তিযোদ্ধার হাতিয়ার, বঙ্গবন্ধুর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘তুমি কে, আমি কে বাঙালি, বাঙালি, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।’

তাদের এই অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাংলামোটর হয়ে আসা যানবাহনগুলো বিকল্প পথে যেতে বাধ্য হয়। একইভাবে মৎস্য ভবনের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো যেগুলো শাহবাগ হয়ে গন্তব্যে যেত, সেগুলোও বিকল্প পথ ধরতে বাধ্য হয়। এতে সেসব সড়কের যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

তবে এসব ভোগান্তি প্রতি ভ্রুক্ষেপ নেই বিক্ষোভকারীদের। তারা মোট ছয়টি দাবি জানাচ্ছেন। এর মধ্যে আছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষকারীদের বিচার, সরকারি চাকরিতে পরীক্ষার শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা, কোটা আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাসভবনে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি ইত্যাদি।

দাবি পূরণের লক্ষ্যে আগামী শনিবার শাহবাগে মহাসমাবেশের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক  আল মামুন বলেন, এই সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সব সদস্য উপস্থিত থাকবে।

সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল ব্যাহত করলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলেও এ ক্ষেত্রে  নমনীয় কেন- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ করছি। সকাল থেকে তাদের অনেক বুঝিয়েছি। তারা কথা শোনেনি।’

সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে আপনাদের কী নির্দেশনা-এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো নির্দেশনা নাই। আমরা শক্তি প্রয়োগ করে তাদেরকে উঠাইনি। কারণ, তারা বলবে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করেছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/এনএইচএস/জেবি)