হালের হেলমেট

মিতা হোসেন
| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:০৩ | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৪২

মোটরসাইকেলে চলতে মাথায় রাখা চাই হেলমেট। যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে মাথাকে সুরক্ষা দিতে হেলমেট খুবই জরুরি। মোটরসাইকেল চালানোর সময় চালক ও আরোহী উভয়ের মাথায় হেলমেট থাকা আইনত বাধ্যতামূলক। অনেকে গরমে মাথার ত্বক ঘেমে যায় এই অজুহাতে হেলমেট পরতে চান না। এখন নানা স্টাইলের হালকা হেলমেট কিনতে পাওয়া যায়, যা পরতে বেশ আরামদায়ক।

মেয়েদের জন্য পাওয়া যায় বর্ণিল রঙের হেলমেট। বাজার ঘুরে এলেই পাবেন বাহারি রং আর নকশা করা হেলমেট। তরুণদের পছন্দ গতানুগতিক গোল আকারের বাইরে একটু ভিন্ন আকৃতির হেলমেট। এসবের মুখের দিকটা একটু লম্বা। মাথার ওপরের অংশে বাড়তি কিছু বসানো মনে হয়। অনেকে আবার নিচ্ছেন রেসিং হেলমেট। এতে থাকতে পারে কয়েকটা রঙের ব্যবহারও। আবার একটু মোটা আর টেকসই ভারী হেলমেট নিচ্ছেন অনেকে। কোনোটির চোখের সামনের অংশ খোলা আবার কোনোটিতে কাচ বসানো। স্বচ্ছ কাচ ছাড়াও আছে মার্কারি কাচের হেলমেট।

মেয়েদের পছন্দের তালিকায় আছে কিছুটা হালকা আর আকারে ছোট হেলমেটগুলো। গোলাপি আর মেরুন রঙের হেলমেটের প্রতি মেয়েদের আগ্রহ বেশি। মাঝবয়সীদের জন্যও আছে নানা ধরনের হেলমেট। আছে নানা ধরনের ছবি বা নকশা করা হেলমেট। সিনেমা বা টিভি চরিত্রের ছবি ফুটে উঠেছে কোনো কোনো হেলমেটে।

রকমফের

বাইক হেলমেট তিনটি মৌলিক ধরনের হয়ে থাকে। সব হেলমেট আরামদায়ক ও যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মাথা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়।

সাধারণ হেলমেট হচ্ছে বিনোদন, কমিউটার, রোড এবং মাউন্টেন রাইডারদের জন্য একটি সুবিধাজনক হেলমেট। এই হেলমেট স্কেটারস ও স্কেট বোর্ড খেলোয়াড়দের কাছে জনপ্রিয়। সূর্য থেকে চোখ রক্ষা করার জন্য এই হেলমেটে ভিসরস যুক্ত করা থাকে।

আরেক ধরনের হেলমেট হচ্ছে রোড-বাইক হেলমেট। এই হেলমেট ওজনে হালকা, স্বাভাবিক বায়ু চলাচল এবং অতি মনোরঞ্জিত নকশাকৃত। এতে ভিসরস বসানো থাকে, যা হেলমেটের ওজন কমিয়ে রাখে।

আরেক রকম হেলমেট হচ্ছে মাউন্টেন-বাইক হেলমেট। কম গতিতে ভালো মুক্ত বায়ু সেবনের জন্য এই ধরনের হেলমেট ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এটি ভিসরস দ্বারা পৃথক, পেছনের দিকের মাথা রক্ষা করার জন্য রয়েছে উন্নত শক্তিশালী ডিজাইন। মাউন্টেন অতিক্রম করার জন্য এই ধরনের হেলমেট নিরাপদ। এগুলোর কিছু ডিজাইন পুরো মুখম-ল সুরক্ষার জন্য, যা পার্ক রাইডার্স ও মাউন্টেন রাইডার্সদের বৈশিষ্ট্য।

থাকুক যতনে...

হেলমেটের মোট চারটি স্তর। সবার ওপরে প্লাস্টিক বা ফাইবারের শক্ত খোলস, তার নিচে কর্কশিটের আবরণ, এর নিচে ফোম, সবার নিচে থাকে কাপড়ের আচ্ছাদন। তাই তো যতœটাও প্রয়োজন একটু বেশি। মোটরসাইকেল হেলমেট সবসময়ই শুকনো আর অপেক্ষাকৃত উষ্ণ স্থানে রাখুন। বাসায় ফিরে হেলমেটের কাচ কিছুটা তুলে রাখুন। এতে ভেতরে বাজে গন্ধ ও লাইনিঙ্গে ফাঙ্গাস পড়তে পারে না। অনেক হেলমেটে ফোমসহ কাপড়ের আচ্ছাদন খুলে ধুয়ে পরিষ্কার করা যায়। চাইলে হেলমেটের ভেতরটা ডিটারজেন্টে ডুবিয়ে, ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের আগে ভেতরটা খুব ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

হেলমেটের সামনের কাচ পরিষ্কার রাখতে প্রতিদিন একবার হলেও পরিষ্কার করে নিন। সপ্তাহে একদিন হাতে সামান্য সাবান লাগিয়ে কাচটার দুই পাশে পরিষ্কার করে আবার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন। সাবান ব্যবহার করতে না চাইলে পানি আর হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ময়লা তোলা ও পরিষ্কারের পর মোছার ক্ষেত্রে টিস্যু বা পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করুন। হেলমেটের এয়ার-ফ্লো ভেন্টগুলো নরম রং করা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে হালকা শক্তির এয়ার ব্লোয়ারও ব্যবহার করতে পারেন।

এভাবে হেলমেটের পরিচর্যা করতে পারলে আপনার হেলমেট দিনে ও রাতে, দুই সময়ই থাকবে স্বচ্ছ, সুরক্ষিত। ভেতরটা পরিষ্কার করাটা ঝামেলা মনে হলে হেলমেটের নিচে পাতলা রুমাল বা সুতি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে হেলমেটের একেবারে নিচের আচ্ছাদনটা আপনার মাথার সংস্পর্শে থাকবে না। আর ঘেমে গেলে বা ময়লা হলে রুমাল নিয়ে ধুয়ে ফেললেই হলো।

বাজারের খোঁজখবর

সড়ক নিরাপত্তায় সম্প্রতি আন্দোলন হয়েছে। এরপর প্রশাসনও সক্রিয় হয়েছে। তাই মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহার বেড়েছে। আগে যেখানে আরোহীর মাথায় হেলমেট দেখাই যেত না, এখন বেশির ভাগ আরোহী হেলমেট পরছেন। এই কারণে বেড়েছে বেচা-বিক্রিও।

রাজধানীর বংশাল, বাংলামোটর ও মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বেশকিছু দোকানে হেলমেট বিক্রি হয়। ঘুরে দেখা যায়, ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা দামের হেলমেট বেশি। এসব হেলমেট মূলত চীন থেকে আমদানি হয়। এর বাইরে কিছু হেলমেট পাওয়া যায়, যার দাম দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এসব হেলমেট থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আমদানি হয়।

বাজারে হেলমেট বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে মান-পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও কোনো হেলমেটে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন নেই।

শিশুদের জন্য হেলমেট

বাতাস কেটে ছুটে চলে দুরন্ত গতির মোটরসাইকেল। শিশুরা এতে বেশ মজা পায়। তবে এই মজা মুহূর্তেই মাটি হয়ে যেতে পারে একটা দুর্ঘটনার কারণে। এখন মোটরসাইকেল চালক এবং এর আরোহীরাও হেলমেট ব্যবহার করছেন। তবে শিশুদের হেলমেট ব্যবহারের বিষয়ে নজরদারি কম। সচেতনতাও কম। নগরের মোটরসাইকেল এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামগ্রীর দোকানগুলোয় বড়দের হেলমেটের পাশাপাশি মিলছে ছোটদের হেলমেটও। নিউমার্কেটে খেলনার দোকানগুলোয় শিশুদের হেলমেট পাওয়া যায়। দাম ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।

বয়সের ওপর নির্ভর করে বাচ্চাদের জন্য সাধারণত দুই ধরনের হেলমেট রয়েছে। চার থেকে ৬ বছরের বাচ্চাদের জন্য রয়েছে এক ধরনের হেলমেট, আর ৭ থেকে ১২ বছরের বাচ্চাদের জন্য রয়েছে আরেক ধরনের হেলমেট। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের হেলমেটই আছে।

ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/এমএইচ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :