শান্তির নোবেলে সংগ্রামের স্বীকৃতি পেলেন মুকওয়েজি

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েজি। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর বুকাভু এর পাঞ্জি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তবে আর দশজন ডাক্তার থেকে তিনি সম্পূর্ণই আলাদা। কারণ, হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা দেন বিদ্রোহীদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার নারীদের।

এসব নারীদের জীবনকে স্বাভাবিক করতে এবং সঠিক চিকিৎসা দিতেই তিনি পার করে দিয়েছেন তার ৬৩ বছরের জীবনের বেশিরভাগ সময়। দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধের সময় থেকে গণধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মুকওয়েজি।

এর আগে বেশ কয়েকবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছিলেন মুকওয়েজি। তবে এবার এই পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হাজার হাজার নারী ও তরুণীকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন এই চিকিৎসক।

কানাডার দ্য গ্লোব এন্ড মেইলেই তথ্যনুসারে, দৈনিক ১৮ ঘন্টা কাজ করেন মুকওয়েজি। প্রতিদিন গড়ে দশটি সার্জারি করতে হয় তাকে। ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানে তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।

শুরুতে আফ্রিকার আরেক দেশ বুরুন্ডিতে মেডিসিন বিষয়ে স্নাতক করার পর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে তাকে দরিদ্র নারীদের সঠিক চিকিৎসার অভাব দেখে তিনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি ফ্রান্সে পাড়ি জমান। এবং এ বিষয়ে ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাঙ্গারসে পড়ালেখা করেন।

সেখান থেকে ফিরে পূর্বের হাসপাতালে যোগ দেন। তারপর ১৯৯৯ সালে তিনি পাঞ্জি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তার হাসপাতালে ৮৫ হাজারেরও বেশি নারী জটিল সব রোগের চিকিৎসা পেয়েছেন। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার।

যখন যৌন নির্যাতনের শিকার নারীরা তার হাসপাতালে আসেন তখন তাদের অবস্থা থাকে ভয়াবহ। সেই চিত্র তুলে ধরে মুকওয়েজি জানান, যখন ধর্ষণের শিকার নারীকে হাসপাতালে আনা হয় তখন তাদের বেশিরভাগই থাকে উলঙ্গ। অনেক সময় এসব নারীদের যৌনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত থাকে। জার্মান ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল মিশন মুকওয়েজির হাসপাতালে আর্থিক ও ওষুক দিয়ে সহযোগীতা করে।

২০১২ সালে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে বক্তৃতা দেন মুকওয়েজি। তখন তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলতে থাকা যুদ্ধের নিন্দা জানান।  একই বছরের ২৫ অক্টোবর তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীর দল তার বাড়িতে হামলা করে। তবে সেসময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পরে বাড়িতে আসার পর তার উদ্দেশে সন্ত্রাসীরা গুলি চালালেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

তারপর থেকে জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি ইউরোপে অবস্থান। আর তার অনুপস্থিতিতে পাঞ্জি হাসপাতালের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। পরে ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি বুকাভুতে ফিরে আসেন। সেসময় তাকে বিমানবন্দর থেকে ২০ মাইল দূরে শহর পর্যন্ত এলাকজুড়ে স্বাগত জানায় সাধারণ মানুষ। আনারস ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে তার টিকিট কেনার অর্থ দিয়েছিলেন এসব সাধারণ মানুষ।

এর আগে তিনি ফ্রান্সের বিশেষ মানবাধিকার পুরস্কার ২০০৭, জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার ২০০৮ এবং সুইডেনের ওলফ পাম পুরস্কার ২০০৮ সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

ঢাকাটাইমস/০৫অক্টোবর/একে