‘দেশ এগিয়ে যাওয়ার আলামত কওমি স্বীকৃতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০৯ | প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০৬

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এর একটা বড় আলামত হলো কওমি সনদের স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সুন্নি মুসলমান। মাদ্রাসাকে ভালোবাসেন বলেই তিনি এই স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমরা তার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।’

শনিবার দুপুরে যশোর চাঁচড়ার মোড়ে এক পথসভায় পথযাত্রার উদ্বোধনী ঘোষণাকালে তিনি এসব কথা বলেন। আলেম-জনতা ঐক্যের দাবিতে যশোর থেকে আল্লামা মাসউদের এই পথযাত্রা শুরু হয়েছে। শেষ হবে সুনামগঞ্জে।

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, আজকের তরুণ ও যুব সমাজ আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যুব সমাজকে ধ্বংস করতেই মাদকের বন্যা ধেয়ে আসছে আমাদের দেশে।

কেবল অভিযান চালিয়ে মাদকের বন্যা বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, মানুষের হৃদয় থেকে মাদকের চাহিদা মিটিয়ে দিতে হবে। আর না হলে মাদকের সয়লাব ঠেকানো যাবে না।

তাবলিগ নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে তা অনভিপ্রেত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে সুন্দর একটা দাওয়াতি কাজ চলছিল। আফসোসের বিষয় হলো, এখানেও বিভক্তি তৈরি করা হয়েছে। বিভাজনকে কমাতেই আমরা এই পথযাত্রা করছি।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসউদ বলেন, প্রথমেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি মিডিয়া ও প্রশাসনকর্মীসহ এখানে উপস্থিত সর্বস্তরের মানুষদের। তিনি বলেন, শ্যামল সুন্দর আমাদের এ বাংলা আল্লাহর অশেষ দান। এ বাংলার অধিবাসীরাও আমাদের দেশের মতোই সুন্দর তাদের অন্তর কোমল ও নরম। এদেশের মানুষ সর্বদাই ইসলাম, আল্লাহ, রাসূলের প্রতি অনুগতশীল ও ধর্মপ্রাণ। ধর্ম ও দীনের প্রতি এতো টান অন্যান্য দেশের লোকদের মাঝে কমই দেখা যায়।

আমাদের দেশের মতো ঘনবসতি পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কি না খুঁজে দেখতে হবে। তবুও আমাদের দেশ আল্লাহর রহমতে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলছে, আমাদের দেশ সারা পৃথিবীর জন্য এখন একটি রোল মডেল। আমাদের উন্নয়নের গতি ও মাত্রাকে আন্তর্জাতিকভাবে সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি আমাদের এ দেশের দুশমন পাকিস্তানিরাও আজ তাদেরকে সরকারকে আহ্বান জানায় যে,আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের অন্তত বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। অথচ এককালে এ পাকিস্তানিরাই আমাদের পরাধীন করে রেখেছিল।

শীর্ষ এই আলেম বলেন, আমাদের সমস্ত অধিকার খর্ব করে রেখেছিল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি আজ সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবমান। কিন্তু আজকে আমাদের যুবসম্প্রদায় হতাশাগ্র্ত। মাদকাসক্তির করাল থাবায় তারা নিমজ্জিত। মাদকাসক্তির কারণে যুবশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ একটি দেশের গৌরব ও বড় শক্তিই হল সে দেশের যুবশক্তি। আমাদের যুবসম্প্রদায়ও খুব সমৃদ্ধশালী ও সম্ভাবনাময়। যদি তাদের কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেখা যাবে, তারা অনেক বড় বড় কাজ করতে সক্ষম। কাজে তাদের অস্বাভাবিক তৎপর দেখা যায়। তেমনিভাবে আমাদের দেশের থেকে বাহিরে গিয়ে যারা কাজ করছেন।

দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দেশের সমস্ত উন্নয়নকে গ্রাস করে নিচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির ব্যাপকতাকে আমাদের দেশে কেউ অস্বীকার করছে না। এমনকি সমাজের প্রায় সর্বস্তরেই দুর্নীতি ছড়িয়ে আছে। শুধু যে সরকারি কর্মকর্তারাই দুর্নীতি করছে এমন নয়। বরং সর্বস্তরেই দুর্নীতি ঢুকে গেছে। ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করছে। যে যেভাবে পারছে দুর্নীতি করছে। এমনকি সেবার জন্য যে সংস্থাগুলো খোলা হয়েছিল, সেখানেও দুর্নীতি করা হচ্ছে।

আল্লামা মাসঊদ বলেন, আসলে দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। তাই আমাদের আহ্বান হবে আমরা যে পথযাত্রা করছি, এ পথযাত্রায় প্রায় এক হাজার আলেম আমাদের সঙ্গে থাকবেন ইনশাল্লাহ। প্রথম আমরা শুরু করছি যশোর থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত। পরে কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত পথযাত্রা করব। আশা করি এতে যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজটা উঠবে, তখন মানুষ সচেতন হতে পারে। আজ তো দুঃখের বিষয়, আমাদের থেকে এ আওয়াজটাও চলে গেছে। দুর্নীতি খারাপ এটা সবাই জানে কিন্তু কারো ভেতর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, ওই যে আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমরা এই আওয়াজকে নতুনভাবে তুলে ধরতে চাই। কারণ, এতে কথাবার্তা উঠবে। আওয়াজ উঠবে। তাতে যদি মানুষের সচেতনা আসে। শুভবুদ্ধি হয়। হবে ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা মাসউদুল কাদিরের পরিচালনায় ও মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন সাইফি। উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনুন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী, মাওলানা আব্দুল হালীম ফরীদী, মাওলানা সাঈদ নিজামী, মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ মাসঊদ, মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা কুতুব উদ্দীন, জামিয়তুল ইসলাহ কিশোরগঞ্জের শায়খুল হাদিস মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন, পঞ্চগড় জমিয়তের আহ্বায়ক মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান, গাজীপুর জমিয়তের আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুর রহীম তালুকদার, কুমিল্লা জমিয়তুল উলামার আহ্বায়ক মাওলানা সারওয়ার আলম ভূইয়া প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :