ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করা ৫৬ শিক্ষক তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার করায় শিক্ষকরা তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক পিনাকী দে জানান, শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় শিক্ষকদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করা হয়।

এর আগে সোমবার রাতে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের জরুরি সভায় সকলের সর্বস্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব তালুকদারসহ পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সংশোধনের দাবিতে ছাত্রলীগসহ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ নেতারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, সোমবার উপাচার্যের সভাপতিত্বে রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত রবিবার পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহসভাপতি ইমরান মিয়া ও পান্না দাস এবং যুগ্ম সম্পাদক জাবির ইকবাল ও ইয়াসিন আরাফাতকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) তাদের সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি দেয়া হয়েছে।

প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, সোমবার রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বোর্ড সদস্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাইদুল হক চৌধুরীকে প্রধান করে একটি অর্ডিনেন্স সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন এই কমিটির সদস্য থাকবেন। এছাড়া রবিবার শিক্ষকদের সাথে কতিপয় শিক্ষার্থীর অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনার বিষয়েও বোর্ড সদস্য জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বহিষ্কারের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতারা দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সংশোধনের দাবি জানানো হয়। এছাড়াও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ওই বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিমের শাস্তি দাবি করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব তালুকদার।

এ সময় সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, সহসভাপতি পান্না দাস ও ইমরান মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক জাবির ইকবাল ও ইয়াসিন আরাফাত এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

গত রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষা শুরু হয়। এ সময় দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের অকৃতকার্য হওয়া এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ পরীক্ষার হলে নিয়ে আসেন। বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেয়ার পরেও জোর করে পরীক্ষা হলে আসনে বসিয়ে দেয় ছাত্রলীগের ওই নেতারা। বিভাগের শিক্ষকরা বাধা দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব তালুকদারসহ তার সহযোগিরা পরীক্ষা হলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই শিক্ষার্থীকে পাহাড়া দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই সকল শিক্ষক সব ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে সোমবার দুপুরে রেজিস্ট্রারের কাছে ৫৬জন শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দেন।

ঢাকাটাইমস/০৯অক্টোবর/আরকে/ইএস