দিল্লিতে সার্ক সাহিত্য সম্মেলন এবং একজন অজিত কৌর

হাসান মাসুম, নয়াদিল্লি থেকে
 | প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৩৪

সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে ৪ থেকে ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের সাহিত্যিকদের সম্মেলন। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং স্বাগতিক ভারতের কবি সাহিত্যিকরা অংশগ্রহণ করেন। ভারত ছাড়া সব চেয়ে বেশি প্রায় ৫৩ জন বাংলাদেশি লেখক এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ এর লেখকদের সাথে আলাপ করে জানা গেল তারা কেবল ঢাকা থেকে নয় বরং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন।

এদের মধ্যে প্রবীণ কথা-সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক আবুল মোমেন, অধ্যাপক বিমল গূহ, কবি নুরুল হুদা, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, শিল্পী শীলা মোমেন, বুলবুল মহালনবিশসহ আরো অনেক নবীন-প্রবীণ লেখক এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

চার দিনব্যাপী এই সার্ক সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা খ্যাতনামা ভারতীয় কথা-সাহিত্যিক অজিত কৌর।তিনি ১৯৮৬ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অজিত কৌরের লেখালেখি বিষয়ে নানা তথ্য বেরিয়ে আসে যা পাঠকদের বিমোহিত করবে।

অজিত কৌর ১৯৩৪ সালের ১৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার নিজ ভাষা পাঞ্জাবি ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন, পরে তার রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এখন তার বয়স তেরাশি বছর। তিনি একাধারে লেখক এবং একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি ১৯৭৭ সালে দিল্লিতে প্রতিষ্ঠা করেন “আকাদেমি অব ফাইন আর্টস এন্ড লিটারেচার” নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি এবং তার কন্যা অর্পণা কৌর দু’জনেই তাদের নিজস্ব স্থাবর সম্পত্তি (বাড়ি এবং জমি) বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকায় গড়ে তুলেছেন এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি, যেখানে শিল্পসাহিত্য ও চারুকলা চর্চার জন্য নিবেদিত প্রাণ সকলে অবাধ বিচরণ করতে পারেন। এটি একটি পাঁচ তলাবিশিষ্ট সুরম্য অট্টালিকা যা নয়াদিল্লির সিরি ফোরট এলাকায় অবস্থিত। নিচ তলায় একটি আর্টগ্যালারি, একটি লাইব্রেরি এবং একটি বিশাল মিলনায়তন রয়েছে যেখানে অনুষ্ঠিত হলো সার্ক সাহিত্য সম্মেলন। এই প্রতিবেদক জানতে চেয়েছিলেন কেন তিনি তার মূল্যবান সম্পদ এমন জনহিতকর কাজে দান করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য দু’বেলা দুটো রূটির প্রয়োজন কিন্তু মানুষের চিন্তার ক্ষুধা মেটানোর খাবারের বড় অভাব। যারা সৃজনশীল লেখালেখি বা চারুকলায় কাজ করতে চান তাদের সুযোগ করে দিতেই তার এই প্রয়াস।

অজিত কৌর বলেন, নিজ ভাষা পাঞ্জাবি ভাষায় তিনি সাহিত্য রচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তার গল্পে উপন্যাসে তিনি পারিপার্শ্বিক সমাজজীবনের চিত্রকল্প ফুটিয়ে তোলেন। তিনি বলেন, তিনি যা দেখেন তা নিয়েই সাহিত্য রচনা করেন, তিনি যা চাক্ষুষ করেননি তা কখনোই কাল্পনিকভাবে তার লেখায় তিনি আনেন না। তার এই ৮৩ বছরের জীবনে তিনি যেমন দেখেছেন অনেক তেমন লিখেছেন ও হাত উজাড় করে। তার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ “ওয়েভিং ওয়াটার” ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে। নবীন লেখকদের নিয়ে অজিত কৌর বলেন, কোন একটি লেখা লিখেই প্রকাশ করার জন্য উদবেল হলে চলবে না, বরং মানসম্পন্ন লেখা লিখতে হবে।

অজিত কৌর সার্ক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজক কমিটির বর্তমান সভাপতি। এই সম্মেলনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সার্কের আওতাধীন রাষ্ট্রসমূহ থেকে আগত কবি সাহিত্যিকদের বিমানভাড়া থেকে শুরু করে আবাসন , আপ্যায়নসহ সকল ব্যয় বহন করা হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের সাহিত্য সম্বন্ধে কি ধারণা জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে অজিত কৌর জানান, বাংলদেশের সাহিত্য তিনি পড়েন, কবি শামসুর রাহমানের উল্লেখ করেছেন যার সাথে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। তার লেখা বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে বলে তিনি জানালেন।

(ঢাকাটাইমস/৯অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :