স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা উপসমের অপেক্ষায় নাজিমও

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২০ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৪

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

১৪ বছর ধরে শরীরে থাকা গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের ব্যথায় এখনও কাতর কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নাজিম উদ্দিন। একযুগ ধরে নিত্যদিনই এসব স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে সেই নারকীয় গ্রেনেড হামলার কথা।

উপজেলা শহরের কালিকাপ্রসাদ এলাকার আকবরনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন। তিন সন্তান, স্ত্রী, মাসহ তার পরিবার।     

২০১৪ সালের ২১ আগস্টের ওই গ্রেনেড হামলার বিচার দেখতে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন হামলায় গুরুতর আহত নাজিম উদ্দিন। অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে বুধবার, যেদিন গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় ঘোষণা করবেন আদালত।

আহত নাজিম উদ্দিন মঙ্গলবার মুঠোফোনে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আশা করছি, রায়ে সকল অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আসামিরা নৃশংস ও জঘন্যতম  ঘটনা ঘটিয়েছিলেন সেদিন।’

২১ আগস্টের সেই শান্তি সমাবেশে অতর্কিত গ্রেনেড হামলায় হত্যার চেষ্টা চালানো হয় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। দলের নেতাদের ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের মানবঢাল ও আত্মত্যাগে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগের সিনিয়র নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হয়েছিলেন প্রায় তিনশ’ জন।

গ্রেনেড হামলায় সেদিন বেঁচে গেলেও এখনও পুরাপুরি সুস্থ হননি নাজিম উদ্দিন। শরীরে স্প্লিন্টারের ব্যথা আর যন্ত্রণা নিয়ে আজও দূর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিন সন্তানসহ পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটছে তার।  

নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার মতো অসংখ্য নিরীহ মানুষ সেদিন আহত হয়ে পঙ্গু জীবন-যাপন করছেন। শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করতেই সেদিন এই গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছেন।’

‘ঘটনার দিন আমি আইভি রহমানকে বাঁচাতে গিয়ে গ্রেনেড হামলার শিকার হই। আহত হওয়ার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। তারপর জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান। তিনমাস চিকিৎসার পর আমি দেশে ফিরে আসি।’

নাজিম বলেন, ‘ডাক্তার বলেছিলেন, পরে আবারও অপারেশন লাগবে। কিন্তু টাকার অভাবে আজও আর অপারেশন করতে পারিনি। শরীরে এখনও অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। যন্ত্রণায় প্রতিদিন কাঁদতে হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল যা ছিল, সব বিক্রি করে দিয়েছি।’

নাজিম জানান, ঘটনার পর বিএনপি সরকার জজ মিয়া নাটক করলে তিনি মনে করেছিলেন, এ বিচার আর হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার এসে এ বিচার শুরু করে। বুধবারের রায়ের প্রাক্কালে তার প্রত্যাশা, অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে খুশি হবেন বলেও জানান তিনি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আরেক আহত ভৈরবের জুবায়ের আলম দানিছ। তিনি বর্তমানে উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।

জুবায়ের আলম দানিছ জানান, সেদিন হামলার সময় আইভি রহমানের পাশেই ছিলেন তিনি। ঘটনার সময় একটু দূরে চা খেতে গিয়েছিলেন।  তারপরও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে লেগে আহত হন তিনি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান । তবে তার আঘাত গুরুতর ছিল না। বুধবারের বিচারের রায়ে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে তিনিও আশা করছেন।

গ্রেনেড হামলা মামলার জীবিত ৪৯ আসামির মধ্যে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু। এই আসামিদের সবার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। অভিযুক্ত ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ তিনজনের ফাঁসি হয়েছে অন্য মামলায়।

সোমবার দুপুরে ভৈরব পৌরসভার মেয়রের কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের ছেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি বলেন , ‘যে যতো শক্তিশালী ও উচ্চপদধারী হোক না কেন, যারাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত, তাদের বিচার হবেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটা সময় ছিল যে, ১৫ আগস্টের বিচার হবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ ছিল। কিন্তু ওই ঘটনার বিচার হয়েছে।  আমারও সে বিশ্বাসটা ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা যত দিন আছেন, তার পক্ষেই সম্ভব ভযাবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার করা।’

‘১৫ আগস্টের পরেই সবচেয়ে নির্মম ঘটনা হলো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা। আমার আম্মা প্রাণ হারিয়েছেন, তার সাথে অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সঠিক বিচার পাবো। এবং যে রায় হবে সে রায়ে যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের সবারই শাস্তি হবে’।

পাপন বলেন, ‘জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে এ বিচার না করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, যেন এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পাই।’

(ঢাকাটাইমস/১০ অক্টোবর/প্রতিনিধি/এআর)