রায় মানেনি বিক্ষুব্ধ জনতা: রিজভী

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একুশের আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’ মেনে নেয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দাবি করেছেন, তাৎক্ষণিক যে প্রতিবাদ হয়েছে, তাতে বিএনপির পাশাপাশি অংশ নিয়েছে সাধারণ জনতা।

বহুল আলোচিত এই মামলার রায়ের পরদিন বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন রিজভী।

আগের দিন দেশ কাঁপানো এই হামলা মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে।

এই মামলায় যে ৪৯ জন সাজা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে সাত জন সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। উপরোক্ত তিন জন ছাড়াও মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন সাভার বিএনপির নেতা মো. হানিফ, যাবজ্জীবন দণ্ড পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আরিফুল হক। কারাদণ্ড পেয়েছেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউকও।

রায়ের পর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আজকের সংবাদ সম্মেলনেও রিজভী এই রায়কে ‘স্টেট স্পন্সর্ড জাজমেন্ট’ (রাষ্ট্রের মদদে রায়) উল্লেখ করে রিজভী বলেন বলেন, ‘বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্যই সরকারের বিশেষ ব্যক্তির মনোবাঞ্ছা পূরণে এই রায়। এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এজন্য যে,একতরফা নির্বাচন করার জন্য এই রায় একটি কারাসাজি।’

এই রায়ের প্রতিবাদে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি আছে বিএনপির। তবে ঢাকায় বিক্ষোভের খবর আসেনি।

রিজভী বলেন, ‘এই মামলার রায় জনগণ প্রত্যাখান করেছে। রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিক্ষোভে সাধারণ জনগণও অংশ নিয়েছে। মিছিলের সময় অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ‘বন্দুকের জোরে’ তাড়িয়ে দেয়া এবং ‘সঠিক বিচার’ করতে গিয়ে জেলা জজ মোতাহার হোসেনকে দেশ ছাড়তে হয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘গতকাল নিম্ন আদালত যদি সঠিক রায় দিতো তাহলে তাকেও (বিচারক) দুর্ভাগ্য বরণ করতে হতো।’

‘মুফতি হান্নানের জবানবন্দি ইচ্ছাকৃত নয়’

জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের যে জবানবন্দির ভিত্তিতে বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামি করা হয়েছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেন রিজভী। দাবি করেন, মুফতি হান্নান এই জবানবন্দি স্বেচ্ছায় দেননি।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সে সময়ের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। মূল হামলাকারীদেরকে বাঁচিয়ে নিরীহ জজ মিয়াকে ফাঁসানোর চেষ্টা এখনও তুমুল আলোচিত বিষয়।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তদন্তে এক দফা জট খুলে মামলাটির। জোট সরকারের উপমন্ত্রী পিণ্টুসহ বিচার শুরু হয় ২২ জনের। ২০১১ সালে অধিকতর তদন্তে আসামি হন তারেক রহমান, বাবর, হারিছ, কায়কোবাদ, হানিফ, আরিফুল, ডিউকসহ আরও ৩০ জন।

রিজভীর অভিযোগ এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফাঁসানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। হাত-পায়ের নখ তুলে নিয়ে অকথ্য শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সম্পূরক জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল। মুফতি হান্নানকে ব্যাপক নির্যাতন করে সিআইডির লিখিত কাগজে তার সই আদায় করা হয়েছে।

তারেক রহমান, বাবরকে জড়িয়ে দেয়া জবানবন্দি মুফতি হান্নান ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহারের আবেদন করেন জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘প্রথমে আবেদনে মুফতি হান্নানের সই ছিল না, তারা বলেন-আইন ও পদ্ধতিগতভাবে এই আবেদন করা হয়নি। এ ধরনের আবেদনে যিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন তাকেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করতে হবে। অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির পর মুফতি হান্নানের সই নিয়ে তার আইনজীবী আবার আদালতে আবেদনটি জমা দেন। তবে এ নিয়ে আদালত কোন আদেশ দেননি।’

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামের ছেলে বিপ্লবকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়েও কথা বলেন রিজভী। বলেন, এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিশেষ ক্ষমতায় অন্যান্যদের মধ্যে প্রায় ছয় হাজারের মতো ভয়ঙ্কর আসামিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বিচার প্রক্রিয়া দুষ্টকে পালন করারই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।

ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/বিইউ/ডব্লিউবি