সরকারের শেষ সময়ে দ্রুত প্রকল্প ছাড়

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:১৭ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে আগে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। আর এ জন্য দুই দিনের ব্যবধানে বসল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের সভা।

গত মঙ্গলবারের একনেকের সভায় ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। আজ ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকায় অনুমোদন দেয়া হয় ১৭টি প্রকল্প।

আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে হবে জাতীয় নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা নির্বাচনকালীন সরকার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। কেবল রুটিন কাজ করবে তারা। এ জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আগেই অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে একনেক।

এক সপ্তাহে দ্বিতীয়বার সভা বসার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বছর বেসরকারি বিনিয়োগ কম থাকে। এ সময় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন আর এর জন্যই বাড়তি সভা করে প্রকল্পগুলো সরকার অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে।

 

অনেক প্রকল্প বস্তবায়ন আটকে গেলেও এত প্রকল্প অনুমোদনে কী রাভ হবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘লোকসানটা কোথায়? বাস্থবায়ন না করলে তো কেউ টাকা নিতে পারবে না।’

একনেকের বাড়তি সভা করার আরও একটি কারণ আছে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমরা ১৪ টি মঙ্গলবার পেয়েছি। তার ভেতরে ১০টি একনেক সভা করেছি। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাহিরে থাকায় দুটি সভা করতে পারিনি আর দুইটি মঙ্গলবার সরকারি ছুটি ছিল। এতে করে আমদের প্রকল্প জমে গেছে।’

‘মঙ্গলবার ছাড়াও হয়তো আরও দুই একটি একনেক সভা করতে পারি। কারণ, আমাদের হাতে এখনও ২৬ টি প্রকল্প হাতে আছে। চাইলে কালকেও মিটিং করতে পারি।’

গত চার বছর ধরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধিতে অগ্রগতির ধারা তুলে থরে মন্ত্রী বলেন, ৬.৫৫ থেকে ৭.১, ৭.২৮ এবং এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮৬ শতাংশ।

‘আমাদের যে প্রবৃদ্ধি আছে এর সঙ্গে দশমিক ৫৮ ধরলে আগামী অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই ৮.২-৮.২৫ হওয়ার কথা। আমরা এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কাজ করছি।’

‘প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আমাদের বিনিয়োগ দরকার। …আমাদের প্রাইভেট সেক্টর থেকে আসা উচিত ৮২ শতাংশ। আর পাবলিক বিনিয়োগ বাকি ১৮ শতাংশ। সেই ৮২ শতাংশ বিনিয়োগটা একটু কম।’

১৭ প্রকল্প অনুমোদন

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় ১৭ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১১ হাজার ১৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে আসবে ২ হাজার ৮১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং বিদেশি সহায়তা মিলকে ১৯৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার নির্মাণে  খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা;।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ২২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ২৫৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ হবে এক হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

বৈরাগীপুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করার প্রকল্পের খরচ হবে ৩০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নন্দিগ্রাম (ওমরপুর) –তালোর -দুপচাঁচিয়া-জিয়ানগর –আক্কেলপুর গোপীনাথপুর জেলা মহাসড়ক এবং নন্দীগ্রাম (কাথম) কালিগঞ্জ-রাণীনগর জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান চত্বরে একটি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৫১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

যশোর অঞ্চল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স (বর্তমান বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জের সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৩৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলায় যমুনেশ্বরী, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী পুনঃখনন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব রিসোর্স ক্যাপাসিটিজ ইন দ্যা কোস্টাল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটারস প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৮৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

দুই প্রকল্প ফেরালেন প্রধানমন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আরও দুটি প্রকল্প ছিল সেগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়নি। এর একটি হলো গুলশান বারিধারা লেক প্রকল্প। আর একটি সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন বিষয়ে। এ দুটি প্রকল্প দুটি আরও একটু দেখে নিতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্প দুটি আটকে যাওয়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রী  বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে যেখানে সোলার প্রজেক্ট হবে সেখানে যেন মাছ চাষের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এ প্রজেক্টে সেটি ছিল না। তাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখানে মাছ চাষের ব্যবস্থা রাখা যায় কি না।’

‘আর গুলশান–বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে প্রায় ১২ হাজার মানুষকে অন্য জায়গায় সরাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেনছেন কোথায় এ মানুষগুলোকে সরানো হবে সেটা নিশ্চিত করে এ প্রকল্প নিয়ে আসতে।’

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/জেআর/ডব্লিউবি)