গ্রেনেড হামলার রায়: বিএনপির ‘নতুন বন্ধুদের’ মুখে কুলুপ

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৮

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চাওয়া রাজনৈতিক নেতারা।

বহুল আলোচিত এই রায়ের পর থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্টের নেতারা।

রায়ের পরদিন দিনভর চেষ্টা করে দুই জন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলেও এই রায়ের প্রসঙ্গ শুনে আর কথা বাড়াননি তারা।

১০ বারেরও বেশি কল করে একবার পাওয়া গেল যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

সব বিষয় নিয়েই প্রতিক্রিয়া জানান, তাহলে এত আলোচিত এই মামলা নিয়ে কথা বলতে বাধা কোথায়- এমন প্রশ্নের জবাব আর পাওয়া যায়নি মাঝপথে মান্না ফোন কেটে দেয়ায়।

কেন কথা বলতে চান না, সেই বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলেছেন কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে আমাদের দলীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই। তবে আমার ব্যাক্তিগতমত হলো এই মামলার রায়ে এখানেই শেষ নয়। সুতরাং এই বিষয়ে এখনই কথা বলার সময় আসে নাই।’

একটা মামলার রায়ের পরও কেন সিদ্ধান্তে আসা যাবে না- এমন প্রশ্নে মোস্তফা আমিন বলেন, ‘এই মামলায় সবে মাত্র লোয়ার কোর্টের রায় হলো। এর পরে আপিল বিভাগ আছে। সুপ্রিম কোর্টের পর যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত যাবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, তাই আমি মনে করি এটা নিয়ে কথা বলার এখনও সময় হয় নাই।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং তিন দল ও সংগঠনের মোর্চা যুক্তফ্রন্ট। একে জাতীয় ঐক্য বলছে তিন পক্ষ। এরই মধ্যে তিন পক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছে একসঙ্গেই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যের ঘোষণা দেয়নি।

ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্ট নেতারা ‘জাতীয় ঐক্যের’ উদ্দেশ্য হিসেবে দেশে আইনের শাসন, সুশাসন নিশ্চিত করার কথা জানাচ্ছেন। আর গত ১৪ বছর ধরেই এই গ্রেনেড হামলা মামলাটি আইনের শাসন ও সুশাসন ইস্যুতে তুমুল আলোচিত।

২০০৪ সালে যখন আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের জনসভায় এই গ্রেনেড হামলা হয় তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। আর সে সময় হামলাকারীদের বাঁচিয়ে জজ মিয়া নামে নিরীহ একজনকে ফাঁসাতে পুলিশের চেষ্টা নিয়ে এখনও আলোচনা তুঙ্গে।

আবার তদন্তে বাধা দিতে সরকারের সিদ্ধান্তে আলামত নষ্ট, একজন সেনা কর্মকর্তা আলামত সংগ্রহ করার কথা বলায় তাকে চাকরিচ্যুত করা, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে তদন্তে বাধাদান, এক হামলাকারীকে ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তাকে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ফাঁস হয় পরে।

আবার সে সময় একটি বিচারিক তদন্ত করা হয়েছিল যাতে এই হামলার জন্য ভারতকে ইঙ্গিত করা হয়। এ নিয়ে হাস্যরসও হয় ব্যাপক।

বুধবার এই মামলার রায়ে যে ৪৯ জনের সাজা হয়েছে তার মধ্যে ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ১৯ জন করে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ১১ জনের।

যে ১৯ জনের ফাঁসি হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন বিএনপির নেতা। এরা হলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু ও সাভার বিএনপির নেতা মো. হানিফ।

এ ছাড়া বিএনপির শাসনামলে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং এনএসআইএর মহাপরিচালক আবদুর রহীমও পেয়েছেন একই দণ্ড।

যাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আরিফুল ইসলাম।

খালেদা জিয়া ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউকেরও সাজা হয়েছে এই মামলায়।

এই রায় হওয়ার পর ড. কামাল হোসেন ও একিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কাছে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, খুনিদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তারা কীভাবে সুশাসনের কথা বলেন। 

ওবায়দুল কাদেরের ছুড়ে দেয়া এই প্রশ্নের জবাব আসেনি কামাল হোসেন বা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পক্ষ থেকে।

এই দুই পক্ষের সঙ্গে বিএনপিকে জুড়ে দেয়ার চেষ্টায় মধ্যস্ততাকারী গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের দিন রাতে এক টকশোতে গিয়ে এই রায় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে সেখানেই তুমুল আক্রমণের মুখে পড়েন।

এরপর বৃহস্পতিবার দিনভর চেষ্টা করেও এই বুদ্ধিজীবীকে পাওয়া যায়নি। বারবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/জিএম/ডব্লিউবি