ঊর্ধ্বমুখী ডলারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৪৩

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় মার্কিন ডলারের দাম। এতে করে বিপাকে পড়েছে আমদানিকারক, ভ্রমনপিপাসু সহ বিদেশে চিকিৎসা এবং শিক্ষারতরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকা।

এদিকে, টাকার মান রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৩ টাকা ৮০ পয়সা দরে ডলার সরবরাহ করছে। যা এক বছর আগের তুলনায় ৩ টাকা বেশি। গত বছর একই সময়ে এক ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা ৮০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে রুপির মান ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশে ডলারের আয় কমতে পারে। এ জন্য রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে টাকা-ডলার বিনিময় হার কিছুটা অস্থিতিশীল। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য কমে গেছে। মাস খানেক আগে আন্তব্যাংক লেনদেনে এক ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮০ টাকা ৭৫ পয়সা। তা দাঁড়ায় ৮৩ টাকা ৮০ পয়সা। এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল করতে বাজারে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসের প্রথম চার কার্যদিবসে চার কোটি ৫০ লাখ ডলার বাজারে ছেড়েছে। আগের দুই মাসে ছাড়া হয়েছিল সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার। জুলাই মাসে ছাড়া হয়েছিল তার প্রায় দ্বিগুণ। ওই মাসে বাজারে ১০ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠায় বেশ কয়েক মাস ধরেই দর হারাচ্ছে উন্নয়নশীল অনেক দেশের মুদ্রা। এর সঙ্গে রয়েছে কোনো কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট। চলতি বছরে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুদ্রা রুপি চলতি বছরে প্রায় ১৭ শতাংশ দর হারায়।  গত শনিবার এক ডলারের বিনিময় মূল্য ওঠে ৭৪ রুপিতে।

টাকাও অনেকটা অভ্যন্তরীণ কারণেই চাপে পড়েছে। গত কয়েক মাসে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু তার বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ সেভাবে বাড়েনি। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় টাকার বিপরীতে তার বিনিময় মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।

দেশের এই মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য আর বাড়তে দিতে চায় না মৃদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। কারণ টাকার মূল্য কমে গেলে বা ডলারের মূল্য বেড়ে গেলে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যেতে পারে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে পূরণ করতে হয় বলে ডলারের মূল্য বাড়লে আমদানি খরচও বেড়ে যায়। তার প্রভাব পড়ে স্থানীয় বাজারে।

এদিকে আমদানি ব্যয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ততটা না বাড়ায় দেশে বৈদেশিক মুত্রার রিজার্ভও কমছে। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন থেকে ৩১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বর্তমান রিজার্ভ আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় পূরণ করতে পারবে।

ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৮ অক্টোবর) এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক শূন্য ২ রুপি। চলতি বছরের শুরুতে (১ জানুয়ারি) যা ছিল ৬৩ দশমিক ৮৮ রুপি। এ হিসাবে ১০ মাসের ব্যবধানে রুপির মান কমেছে ১৫ শতাংশ। এখন এক ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ৭৪ দশমিক শূন্য ২ রুপিতে, যা রুপির ইতিহাসে এটি সর্বনিম্ন দর।

এদিকে ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রাও শক্তিশালী হচ্ছে। ৭ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি রুপিতে মান দাঁড়ায় ১ টাকা ১৪ পয়সা। তবে গত বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) প্রতি রুপিতে মান কমে ১ টাকা ১৩ পয়সায় নেমেছিল। অর্থাৎ ১১৩ টাকায় ১০০ রুপি পাওয়া গেছে। টাকার বিপরীতে রুপির এ দর এযাবৎকালের সর্বনিম্ন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৭ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর উঠেছে ৮৩ দশমিক ৮০ টাকায়। আর ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম সোমবার দাঁড়িয়েছে ১১২ টাকা ২৯ পয়সা। নগদ ডলারের মূল্য সবচেয়ে বেশি উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে। ব্যাংক দুটিতে সোমবার প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা।

সাধারণ মানুষের কাছে নগদ টাকায় সবচেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করছে এনআরডি গ্লোবাল ব্যাংক। ব্যাংকটি নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৪ টাকা ৩০ পয়সায়।

এদিকে চলতি বছরের ২৮ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের দাম একটি জায়গায় স্থিতিশীল রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ে বাজারে ডলারের সংকট সামাল দিতে ব্যাংকগুলোর কাছে ২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১৯৭ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুখপাত্র) সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। রফতানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর সুবিধার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফল আমদানি কারক মেসার্স শিশু ট্রেডার্স এর সত্বাধিকারী সাধন চন্দ্র দাশ ঢাকা টাইমসকে জানান, ভারতে পণ্য বেশিরভাগ কেনাবেচা হয় ডলারে। ফলে টাকা শক্তিশালী হলে বা রুপির মান কমলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। তবে যারা ভারত ভ্রমণ করবেন কিংবা টাকা ভাঙাবেন তারা লাভবান হবেন।

মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন জানান, বিদেশ থেকে মেশিনারিজ বা পণ্য আমদানি করতে আমাদের  আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/ আরএ/মোআ)